আইনজীবী সালমা হাই টুনি

কিছু আইনজীবীর অসততায় সাধারণ মানুষ আদালতকে ভয় পায়: সালমা হাই টুনি

সালমা হাই টুনি পেশায় একজন আইনজীবী। বর্তমানে ঢাকা দায়রা জজ আদালতের দ্রুত বিচার আদালত-৬ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক।

ভারতেশ্বরী হোমস থেকে শিক্ষা জীবনের শুরু করেন এই তরুণ আইনজীবী নেতা। ১৯৮৭ সালে হাজি আমজাদ আলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি ও ১৯৮৯ সালে মুন্সীগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর সরকারি ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ডিগ্রী এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিটি ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি করার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.এম পাশ করেন।

শিক্ষা জীবন শেষ করে ২০০০ সালে ঢাকা বারে সদস্য হন এবং নিয়মিত প্র্যাকটিস শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ লাভ করেন। পেশা জীবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ষ্টেট ডিফেন্স হিসেবেও সাফল্যের সাথে কাজ করেছেন তিনি, যেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মত বিশেষ দুটি মামলা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন।

২০১০-২০১১ বর্ষে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির এই সাংস্কৃতিক সম্পাদকের রাজনীতিতে হাতে-খড়ি ছাত্রজীবনেই। তবে ইডেন কলেজ এ পড়া অবস্থায় ‘৯০ এর গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ঢাকা বার শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বামী, সন্তান নিয়ে দাম্পত্য জীবনে সুখী এই আইনজীবী নেতা রাজনীতি করতে এসে পারিবারিক কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। বিয়ের আগে পেয়েছেন বাবার অফুরান সমর্থন। আর বিয়ের পর স্বামীর বন্ধুসুলভ সমর্থন তাকে রাজনীতিতে আরো বহুদুর এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগান দিচ্ছে। রাজনীতিতে কতদূর যেতে চান এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কতদূর যেতে চাই তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, তবে আপাতত সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছা আছে।’

দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী হিসেবে রাজনীতিতে এসে ছোট খাট বাধার সম্মুখীন হলেও তার সুদৃঢ় মনোবলের কাছে সেসব বাধা পাত্তা পায়নি। এবং তিনি এটাও মনে করেন যে দেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ নারীদের জন্য রাজনীতি বান্ধব। একদিকে সংসার, আইনপেশা অপরদিকে রাজনীতি একসাথে পরিচালনা করতে কোন সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি সংসার, কর্মক্ষেত্র এবং রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে সময়ের সমন্বয় করা যায় তবে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়, আমি সেটাই করি।’

সাধারণ মানুষ আদালতকে ভয় পাওয়ার কারণ কি এ বিষয়ে জানতে চাইলে ল’ইয়ার্সক্লাববাংলাদেশ.কম কে অ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি বলেন, ‘দেখুন চালের ভেতর মরা কাঁকর থাকবেই, আর অল্প কিছু আইনজীবীদের অসততা এমন পরিস্থিতির তৈরি করেছে। এছাড়া আমি এমন অনেক দেখেছি যারা আইনজীবী না তবু কোর্ট এরিয়াতে কালো কোট বা গাউন পরে আইনজীবী সেজে থাকে, এত আইনজীবীর মধ্যে এদের কে খুঁজে বের করাও কষ্টসাধ্য। মূলত এই টাউডদের জন্যই এই ধরণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ তবে এমন পরিস্থিতির জন্য শুধু আইনজীবীরা দায়ী নয় দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে বাদী পক্ষ মামলা করে আসামি যেন সারাজীবন জেল-হাজতে থাকে কিংবা সর্বোচ্চ সাজা যেন পায় সে ব্যবস্থা করতে বলেন, ঠিক একইভাবে আবার কোন আসামি এসে বলে তাকে দ্রুত জামিন নিয়ে দিতে। এখন একটি মামলায় তো দুই পক্ষ জেতা সম্ভব নয়, এছাড়া বিচার করার দায়ভার তো আমাদের নয় আমরা শুধু বাদী কিংবা আসামি পক্ষের কথাগুলো আদালতে উপস্থাপন করি। কোন কারণে ব্যর্থ হলে দোষ হয় আইনজীবীর।’

এছাড়া আইনজীবীরা মামলা ঝুলিয়ে রাখেন এমন অভিযোগের সত্যতা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে আইনজীবীদের দোষ দেওয়া ঠিক না। কেননা একটি বিচার ব্যবস্থায় বাদী, আসামি, আইনজীবী ও বিচারক সব কিছুর সমন্বয় লাগে। আর এই প্রত্যেকটি বিষয়ের সমন্বয় সাধন হলেই একটি মামলা দ্রুত শেষ হয়। আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করে করে মামলা ঝুলিয়ে রাখেন এমন অভিযোগ থাকলেও ভেতরে খোঁজ নিলে দেখা যাবে বেশীরভাগ সময় মক্কেলের জন্যই মামলার তারিখ পেছানোর আবেদন করতে হয়। দেখা যায় আসামি পক্ষ হলে জামিন হওয়ার পর হাজিরা দিতে আসতে চায় না। ফলে আইনজীবীর সময়ের আবেদন করা ছাড়া উপায় থাকে না। আর বাদী পক্ষ হলে সঠিক তারিখে সাক্ষী হাজির করতে পারে না।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি মনে করি আইনজীবীরা সততার সাথে দায়িত্ববোধ থেকে পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করলে এই সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি বাদী কিংবা আসামিদেরকেও মামলা করা থেকে শুরু করে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলায় নিযুক্ত আইনজীবীকে  প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত কিংবা মামলার স্বার্থে দরকারি সকল ধরণের সহযোগিতা করা উচিৎ। এবং সে ক্ষেত্রে আইনজীবী, বাদী কিংবা আসামি সকলের সচেতন মানসিকতা সৃষ্টি করা জরুরী।’

 

কাজি ফয়েজুর রহমান/লইয়ার্সক্লাববাংলাদেশ.কম।