অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম

দু’চোখে আলো নেই তাতে কি, হয়েছেন আইনজীবী

কোনো প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া জহিরুল ইসলামকে। অন্ধ হয়েও লেখাপড়া করে আজ তিনি একজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির একজন নিয়মিত সদস্য।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে দুটি চোখ তার নষ্ট হয়ে যায়। তবুও তিনি জীবন যুদ্ধে থেমে থাকেননি। লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে আজ তিনি আইনজীবী হয়েছেন। চালাতে জানেন মোবাইলও। চোখ অন্ধ হলেও অদ্ভূত এক শক্তিতে মোবাইল নম্বর খুঁজে বের করতে পারেন। আর যাদের ফোন নম্বর সেভ করা থাকে তারা কল দিলেই তাদের নাম বলে ওঠে সাউন্ড সিস্টেমে। অপরিচিত নম্বর হলে সেই নম্বর সাউন্ড সিস্টেমে শুনতে পান তিনি। তার মোবাইলটিও এমন করে সিস্টেম করানো।

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কথা হয় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি জানালেন তার হার না মানা জীবন সংগ্রামের কথা। দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও তাকে থামাতে পারেনি জীবন চলার পথে। দুটি চোখ নষ্ট থাকার কারণে আইন পেশায় পুরোদমে নিজেকে নিয়াজিত রাখতে পারছেন না। তিনি খুঁজছেন একটি চাকরি। সরকারি চাকরিতে কোটা ভিত্তিতেও সুযোগ মিলছে না তার।

অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার ঐরাব এলাকার বাসিন্দা। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে জহিরুল ইসলাম দ্বিতীয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে জহিরুল ইসলাম হাম রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়।

অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম তার স্ত্রী এবং তাদের সন্তান .

তিনি জানান, জীবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন ঢাকায়। পরবর্তী সময়ে জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। আদমজী এমডব্লিউ কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। ২০০৯ সালে অনার্স ও ২০১০ সালে এলএলএম এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে ২০১৩ সালে অংশগ্রহণ করে তিনি আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য। তিনি বিয়ে করেছেন ২০১২ সালে। তার সংসারে একটি সাড়ে তিন বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন তিনি।

তিনি লেখাপড়া করেছেন অডিও ভার্সনে এবং ব্রেল সিস্টেমে। পরীক্ষা দিয়েছেন শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে। পরিচিত এলাকা দিয়ে তার পথ চলতে সমস্যা হয় না। সাদাছড়ি ব্যবহার করেন তিনি। তবে অপরিচিত এলাকা কিংবা জনবহুল এলাকায় গেলে তাকে অন্যের সহযোগিতা নিতে হয়।

জহিরুল ইসলাম বলেন, কোর্টে আসি। তবে আমার একটা চাকরি দরকার। চাকরির জন্য কোটা ভিত্তিতে পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ কোর্টে এলেও অন্যের সহযোগিতা ছাড়া মামলা তো পরিচালনা করতে পারি না। তবে আমাকে সব বিষয়ে সহযোগিতা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া।

এ বিষয়ে সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসিন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। সে জীবন চলার পথে হারেনি। সে জয়ী হয়েছে। দুটি চোখ নষ্ট থাকলেও সে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত। এটা কেবল তার মনোবল ইচ্ছা ও চেষ্টায় সফল হয়েছে।’

কৃতজ্ঞতা- ঢাকাটাইমস

 

সম্পাদনা- লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম