মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি -এর প্রতিবেদন

রাখাইনে সেনাবাহিনীর ধর্ষণ পরিকল্পিত

রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্বিচার ও পরিকল্পিতভাবে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ চালিয়েছে। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ২৯ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সোমবার দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কখনও সামনে স্বামীকে বেঁধে রেখে, কখনও আবার স্বামী-সন্তানকে হত্যার পর ধর্ষণ করা হয় ওই নারীদের। ধর্ষণের আগে-পরে রোহিঙ্গা নারীদের গোপনাঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বর্তমানে অবস্থান করছেন এসব রোহিঙ্গা নারী। তারা মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এমন নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে এসেছেন। পৃথক পৃথকভাবে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হলেও সবার ঘটনা প্রায় একই বলে জানান তারা। প্রত্যেকেই নিজের নামের প্রথম অক্ষর বলতে রাজি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার দেয়া ২৯ নারীর জবানবন্দি তুলে ধরা হয়েছে এ রিপোর্টে। এতে তারা শুধু তাদের নামের প্রথম অংশ প্রকাশে রাজি হয়েছেন। পুরো নাম প্রকাশ করলে দেশে ফিরলে তাদের অথবা তাদের পরিবারের সদস্যদের সেনারা হত্যা করবে এমন আতঙ্ক রয়েছে তাদের মধ্যে। তাদের বয়স ১৩ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ নিপীড়ন চলে।

এর আগে জাতিসংঘ এবং দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও গার্ডিয়ানের পৃথক তিন অনুসন্ধানে একই রকম বাস্তবতা উঠে এসেছিল। রোহিঙ্গা নারীদের এ সাক্ষ্য জাতিসংঘের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ মিল রয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়িত করার লক্ষ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধর্ষণকে ‘সন্ত্রাস সৃষ্টির পরিকল্পিত অস্ত্র’ হিসেবে পদ্ধতিগতভাবে ব্যবহার করছে। তবে নিজেদের অনুসন্ধান সম্পর্কে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অবস্থান জানার চেষ্টা করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এপি।

যৌন নির্যাতনের শিকার ‘এফ’ নামের একজন বলেন, জুন মাসের এক রাতে ঘুমাচ্ছিলেন তিনি ও তার স্বামী। হঠাৎ মাঝ রাতে তাদের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে সাত সেনা। তখনই বুঝে যান কি ঘটতে চলেছে তার সঙ্গে। তার বাবা-মা ও ভাই খুন হয়েছেন এ সেনা সদস্যদের হাতে। আর এবার এলো তার জন্য। এসেই তার স্বামীকে বেঁধে ফেলে, মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। অসহায় হয়ে পড়ে দু’জনই। এরপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। একই সঙ্গে চলতে থাকে বেত্রাঘাত। একটা সময় মুখের কাপড় ফেলে চিৎকার করতে সক্ষম হয় তার স্বামী। কিন্তু তখনই সেনারা গুলি করে। একজন কেটে ফেলে গলা। আর ধর্ষণের পর তাকে বাইরে এনে পুড়িয়ে দেয় বাড়ি। ২ মাস পর এফ জানতে পারেন তিনি গর্ভবতী।

নিপীড়নের শিকার প্রত্যেক নারীই বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একদল কর্মী এ কাজে যুক্ত ছিল। একজন বাদে প্রত্যেক নারীই বলেছেন যে, হামলকারীদের পরনে সেনাবাহিনীর মতো ইউনিফর্ম ছিল। যেই একজন বলেছিলেন যে হামলাকারী সামরিক পোশাকে ছিলেন না তাকেও সেনা ঘাঁটিতে দেখেছেন প্রতিবেশীরা। অনেক নারী জানান, হামলাকারীদের পোশাকে তারা, তীর কিংবা সামরিক বাহিনীর অন্যান্য চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। ‘এফ’- এর মতোই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় সবাই। প্রথমে পুরুষদের কাছ থেকে তাদের আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর অন্য কোথাও নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয় তাদের।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম