এসসিএলএস’র লোগো

আইন শিক্ষায় পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে এসসিএলএস’র প্রথম বর্ষপূর্তি

২০১৬  সালের ১৯ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে সোসাইটি ফর ক্রিটিকাল লিগ্যাল স্টাডিজ (এসসিএলএস)। ইতোমধ্যে পূর্ণ করেছে এক বছর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে সোসাইটি ফর ক্রিটিক্যাল লিগ্যাল স্টাডিজ (এসসিএলএস) স্বপ্ন, আবেগ ও বন্ধনের নাম। যারা স্বপ্ন দেখেন দেশের আইন শিক্ষাঙ্গনে পরিবর্তন আনতে, আইন শিক্ষাকে নতুন আঙ্গিক দিতে।

মূলত এটি চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি সংগঠন। তবে কাজের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে সারাদেশে। যদিও তাদের কর্মসূচীগুলো নেয়া চট্টগ্রামে তারপরও তাদের এই উদ্যোগে দেশের অন্যান্য আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেন। আইন শিক্ষার্থীরাও নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে ছুটে আসেন এসব অনুষ্ঠানে।

(এসসিএলএস) নিয়ে এই সংগঠনের নেতৃত্বে যারা আছেন তারা বলছেন, ‘আইন শিক্ষাকে আরো বেশি বেগবান এবং আইনকে উপভোগ্য করে তুলতে এসসিএলএস তার যাত্রা শুরু করেছে। যেটি আইন শিক্ষার্থীদের আরও মননশীল হতে সাহায্য করবে।’

(এসসিএলএস) এর পথ চলা শুরু হয় আইন বিভাগের কিছুর শিক্ষার্থীর হাত ধরে, যারা সহজাত চিন্তার বাইরে ও চিন্তাকে আত্মস্থ করতে ভালবাসে, বড় স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। যাদের পথ প্রদর্শক আর দিকনির্দেশনাকারী হিসেবে সবসময় পাশে থেকে পথ দেখিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এম. জসিম আলী চৌধুরী। যিনি বর্তমানে লন্ডনে অধ্যয়নরত রয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য। এসসিএলএস এর প্রতিষ্ঠাতা মডারেটর হিসেবে আইন শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনে অবদান রাখার জন্য সব সময় তার ছাত্রদের দিয়ে যাচ্ছেন প্রেরণা। অধ্যাপক জসিম বর্তমানে সংগঠনের এম্বাসেডর হয়ে কাজ করছেন এবং মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা।

এসসিএলএস পথচলায় পূর্ণ করেছে এক বছর। তাই এক বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে নিজেদের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করছেন। সবার সামনে তুলে এনেছেন তাদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড। জানা গেছে আনুষ্ঠানিক যাত্রা থেকে এই পর্যন্ত এসসিএলএস এ পর্যন্ত ৮টি মাসিক সেমিনার। প্রত্যেকটি সেমিনারে আইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ৩টি কর্মশালা যেখানে রয়েছে বিতর্ক কর্মশালা, আর্গুমেন্টেটিভ বা মুটিং কর্মশালা এবং ১টি আইন গবেষণার মৌলিক বিষয় নিয়ে কর্মশালা, যার সূত্র ধরে হরিজন সম্প্রদায় নিয়ে ১টি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করা হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ‘ল অলিম্পিয়াড’ আয়োজন করতে সমর্থ্য হয়েছে এসসিএলএস। ল অলিম্পিয়াড ছিল বাংলাদেশের আইন শিক্ষার্থীদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা। যেটি আইন শিক্ষার্থীদের ও প্রথম বারের কোন অলিম্পিয়াড এ অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের ১৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

মায়ানমার সেনাবাহিনী যখন আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছিল এবং সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী যখন বাংলাদেশ তখন বসে থাকেনি এসসিএলএস। রোহিঙ্গাদের প্রতি বর্বরতা ও গণহত্যার বিচারে মায়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে দোষী সাব্যস্ত করে একটি ছায়া আদালত স্থাপন করে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই আদালত স্থাপন হয় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে। ছায়া আদালতে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ ও আইন বিষয়ক নিউজ পোর্টাল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম এর সম্পাদক ড. বদরুল হাসান কচি।

সম্প্রতি এসসিএলএস চট্টগ্রামের দুইটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাথে যৌথভাবেও কাজ করেছে। আয়োজন দুটো যথাক্রমেঃ এসসিএলএস-আইআইইউসি ল’ ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিন ব্যাপি কর্মশালা। এতে প্রায় ২২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। একইভাবে এসসিএলএস-পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটি আইন বিভাগের যৌথ কর্মশালা। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে পরিবেশ আইনের উপর এসসিএলএস আয়োজন করেছে ড. মহিউদ্দিন ফারুক মেমোরিয়াল মুটিং কম্পিটিশন।

‘দ্যা সোসাইটি ফর ক্রিটিক্যাল লিগ্যাল স্টাডিজ’ (এসসিএলএস) এর আয়োজনে “দ্য শীপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রীজ অব বাংলাদেশ : এ কোয়েস্ট ফর এনভাইরনমেন্টাল জাস্টিস” শীর্ষক এক সেমিনার ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৈনিক আজাদী পত্রিকার কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে কীনোট স্পিকার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ‘কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি’ এর সিনিয়র লেকচারার ড. সাইফুল করিম।

সর্বশেষ সংগঠনের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘থট অন গ্লোবাল গভার্নেন্স থ্রু ল’ শীর্ষক দ্বিতীয় পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক ড. মোস্তফা হায়দার।

এ পর্যন্ত (এসসিএলএস) এর বিভিন্ন আয়োজনে উপস্থিত ছিল বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের তারকারা। যার মধ্যে রয়েছেন দুইজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, ৫০ জন বিচারক, ৫ জন ব্যারিস্টার, ২০ জন আইন শিক্ষক এবং ৩০ জন আইনজীবী এসসিএলএস এর মঞ্চ অলংকৃত করেছেন এই অবধি।

আইন শিক্ষা ব্যবস্থার বেড়াজাল ছিন্ন করে এভাবেই এসসিএলএস স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 নিজস্ব প্রতিনিধি/ লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম