রাজ্যসভায় তিন তালাক বিল পাস স্থগিত

গত ২৮ ডিসেম্বর ভারতীয় আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভায় বহুল আলোচিত তিন তালাক বিরোধী বিলটি পাস হলেও বুধবার (০৩ জানুয়ারি) উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তা পাস হতে পারেনি। বিরোধী দল কংগ্রেস তাড়াহুড়ো করে বিলটি পাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তুমুল বিতণ্ডার মুখে তা আর পাস হতে পারেনি।

ক্ষমতাসীন দল বিজেপি রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করে। তবে কংগ্রেস ও বিজেপিবিরোধী দলগুলো বিলটিতে ফাঁকফোকড় রয়েছে বলে দাবি করে। তারা বিলে বর্ণিত দীর্ঘ কারাদণ্ডের বিধানটি আরও খতিয়ে দেখার যুক্তি তুলে ধরে। এজন্য তারা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য পার্লামেন্টের বিশেষ কমিটিতে প্রেরণের দাবি জানায়।

এ নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে দিনভর তুমুল বিতণ্ডা চলে। বিশেষ কমিটিতে বিলটি পাঠানো হবে কিনা এনিয়ে কংগ্রেস ভোটাভুটির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ভোটাভুটির বিরোধিতা করে বিজেপির সদস্যরা অধিবেশন মুলতবি করতে স্পিকারকে বাধ্য করেন। ফলে বিলটি আর পাস হতে পারেনি।

চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাস হবার আর কোনো আশা নেই। কেননা শুক্রবারই এ অধিবেশন শেষ হবে।

বিলটি পাস করার আগে তা বিশেষ সিলেকশন কমিটিতে যাচাইয়ের জন্য পাঠানোর ব্যাপারে কংগ্রেসের দাবির পেছনে বেশ কিছু অকাট্য যুক্তি ছিল। তিন বছর কারাবাসের বিধান নিয়ে তাদের আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে, তালাকদাতা ব্যক্তি যদি এতো দীর্ঘকাল জেলে পচে মরে, তাহলে তার পরিবারের ভরণ পোষণ করবে কে? এছাড়া এটি আইন হয়ে গেলে অনেকেই এর অপব্যবহার করবে। অনেক ক্ষেত্রে নিরীহ ব্যক্তিদেরও এ সংক্রান্ত মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।

বিলটি পাস না হওয়ার জন্য বিজেপি কংগ্রেসকে দায়ী করে বলেছে, এ ব্যাপারে কংগ্রেসের ভণ্ড চেহারাটি আবার বেরিয়ে পড়েছে। তারা তাদের দ্বিমুখি চেহারাটি স্পষ্ট করেছে।

এর আগে ২৮ ডিসেম্বর কোনো সংশোধনী ছাড়াই কণ্ঠভোটে লোকসভায় বিলটি পাস হয়। বিল অনুযায়ী , তাৎক্ষণিক তালাক বা তিন তালাক বা তালাক-ই-বিদ্দত দিলে মুসলমান পুরুষকে ৩ বছরের জেল খাটতে হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে।
বিল অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের পর নাবালক-নাবালিকা সন্তানের দায়িত্ব সরাসরি মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাৎক্ষণিক তালাক দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের পর জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হবে। যার সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর হতে পারে। স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে খোরপোষের দায়িত্বও স্বামীকে বহন করতে হবে। এমনকি সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্বও স্বামীকেই নিতে হবে।

লোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর মুসলিম প্রধান দলগুলোর মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম