সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

‘আমাদের দুঃখ- আমাদের বেদনা- এভাবে বিচার বিভাগ চলতে পারে না’

এভাবে বিচার বিভাগ চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে বিদায় করা হয়েছিল, তা আপনারা দেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি লিখতে হয়। আমাদের দুঃখ- আমাদের বেদনা- এভাবে বিচার বিভাগ চলতে পারে না।’

রবিবার (৭  জানুয়ারি) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শাহবাগ থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলায় যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময় আমরা (সভাপতি এবং সম্পাদক) সুপ্রিম কোর্টে ছিলাম। আমি ছিলাম হাইকোর্ট বিভাগের সাত নম্বর কোর্টে আর সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন ছিলেন ছয় নম্বর কোর্টে।’

এ প্রসঙ্গ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাস্তায় মিছিল করিনি, আমরা কোনও বোমাবাজি করতে যাইনি। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’

এসময় জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপরে যখন আক্রমণ-হামলা এসেছে তখনি আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছি। কখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটতে পারে এমন কোনও কাজে আমরা অংশগ্রহণ করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এমন ইতিহাস অতীতে নেই। শুধুমাত্র স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময় অ্যাডভোকেট শামছুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং বর্তমানে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকা বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাসহ ১১ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছিল কিন্ত খুব বেশি দিন রাখতে পারেনি। পরে ছেড়ে দিতে হয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় ছিল। বেগম খালেদা জিয়া তিন বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন, মেজবাহ উদ্দিন, বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সভাপতি ছিলেন। কারও বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি।’

বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সেজন্য তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। আইনজীবী আহসান হাবিব, খালেদা পান্না, মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি গত ২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সামনে আইনের শাসন নিয়ে কথা বলেছি আর ৩ জানুয়ারি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত সাক্ষী আমরা সেদিন কোর্টে ছিলাম।’

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘মামলা করেছেন শাহবাগ থানার এসআই আনোয়ার হোসেন। মামলায় ঘটনার তারিখ ৩ জানুয়ারি উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বেলা আনুমানিক তিনটা ১০ থেকে তিনটা ৪৫ পর্যন্ত। আমরা দু’জনই বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী। ওই দিন আমরা বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত আদালতে উপস্থিত ছিলাম। মামলা শেষে আমরা একসঙ্গে পৌনে তিনটায় সুপ্রিম কোর্টে আসি। আমরা যে সুপ্রিম কোর্টে ছিলাম মাননীয় প্রধান বিচারপতি এ ঘটনার সাক্ষী। প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সুপ্রিম কোর্টে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। আমরা তখন কোথায় ছিলাম তা সিসিটিভি দেখলেই বোঝা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, যুগ্ম-সম্পাদক শামীমা সুলতানা দিপ্তী, সদস্য শেখ তাহসীন আলী, মো. হাসিবুর রহমান, আয়েশা আক্তার ও মৌসুমী আক্তার প্রমুখ।