বাংলাদেশ পুলিশ লোগো

দুই আইন সংশোধনের আবদার পুলিশের

সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে সংশোধন চায় পুলিশ। এর মধ্যে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনটি ৩ বছর আগেই পুলিশ সদর দপ্তর সংশোধনের প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সংশোধন হয়নি। পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আনা হচ্ছে। আগের মতো নিম্নআদালতে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পুলিশের ওপর ন্যস্ত করার দাবি তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ সপ্তাহে একগুচ্ছ দাবি উত্থাপন করবে পুলিশ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৪০। (১) ধারায় বলা হয়েছে এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা, তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিতক্রমে মামলা রুজু করবে এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করিবে। (২) ধারায় বলা হয়েছে, সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারার্থ আমলে গ্রহণ করবে না।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো ঘটনায় মামলা করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে বেশিরভাগ সময় অনুমতি পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতেও কালক্ষেপণ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসের পর মাস এ সংক্রান্ত ফাইল পড়ে থাকে মন্ত্রণালয়ে। এই সুবিধা নিয়ে অনেক সময় দুর্ধর্ষ প্রকৃতির গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দাগি আসামিরা জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। যে কারণে দুই ধারাতেই সংশোধন চায় পুলিশ।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগদলীয় এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে বেসরকারি বিল হিসেবে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) বিল উত্থাপন করেন। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়। সাবের হোসেন চৌধুরী এক সময় পুলিশ দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতন এবং অন্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের কার্যকারিতা দিতেই দফায় দফায় যাচাই-বাছাই শেষে আইনটি জাতীয় সংসদ পাস করেছিল। আইনটিতে ২০টি ধারা রয়েছে। যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ছাড়াও সব ধরনের সরকারি হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার শাস্তি এবং বিচার প্রক্রিয়ার নানা বর্ণনা দেওয়া আছে। আইন প্রণয়নের দুবছর পর ২০১৫ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই আইনের ১৪টি ধারা ও উপধারা সংশোধনী চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করে। প্রস্তাবে আইনের ৭টি ধারা বিলুপ্ত করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি একটি নতুন ধারা সংযুক্তি করার সুপারিশ করা হয়। আইনটি নিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। গত বছর পুলিশ সপ্তাহেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইনটি বাতিলের দাবি তোলা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রণীত আইন বিচারব্যবস্থা বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, ধারা সংযোজিত হয়েছে। এ ছাড়া আইনে মামলা দায়ের, তদন্ত কার্যক্রম, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শাস্তি অনুযায়ী জামিন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বিধানও যুক্ত করা হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের দৈনন্দিন কাজ গতিশীল করতে বেশ কিছু দাবি উত্থাপিত হবে পুলিশ সপ্তাহে। সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানানো হবে।

এদিকে আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকালে রাজারবাগ পুলিশলাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহের (২০১৮) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, পুলিশ সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বীরত্বপূর্ণ ও সাহসিকতা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ করবেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রী দরবার (কল্যাণ প্যারেড) করবেন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে। দরবারকালে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হবে। এ ছাড়া কাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালেও নিজেদের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। দুটি আইন সংশোধন ছাড়া আরও যেসব দাবি এবার পুলিশের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হবে, তার মধ্যে পুলিশ বিভাগের সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদ আরও বাড়ানোর দাবি তোলা হবে। এ ছাড়া সাক্ষীদের যাতায়াত খরচ পুলিশ সুপারের অধীনে ন্যস্ত। ‘সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ নামে একটি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠা, যানবাহন বৃদ্ধি, মোটরসাইকেল কিনতে এসআইদের ২ লাখ টাকা লোন প্রদান, প্রশিক্ষণ ভাতা বৃদ্ধি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পোশাক সরকারিভাবে সরবরাহ, পুলিশের নামে বরাদ্দ করা খাসজমির দ্রুত নামজারির ব্যবস্থা, পুলিশের অনুকূলে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বরাদ্দ, কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আলাদা ব্যাটালিয়ন গঠন, ডিএমপিতে ডাম্পিংয়ের জন্য ১০ একর জমি বরাদ্দ, ১৯৭২ থেকে ৭৪ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশকে ১৫৩টি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বর্তমানে ৪৯টি বাড়ি পুলিশের দখলে রয়েছে। বাকি বাড়িগুলো পুলিশের নামে নামজারির ব্যবস্থা করা। আরও কিছু দাবি উত্থাপিত হবে।

এবারই প্রথম পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ও জনপ্রশাসনমন্ত্রীর সঙ্গে সেশন রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এসব মন্ত্রীর মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিষয় নিষ্পন্ন করতে তাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরবে পুলিশ। আমাদের সময়