কক্সবাজারে যাঁরা জেলা জজের দায়িত্ব পালন করেছেন
বিচারক (ছবি - প্রতীকী)

জেলা জজ পদে পদোন্নতির দ্বার খুললো বিচারকদের

অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির শর্ত শিথিল করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর ফলে জেলা জজ পদে পদোন্নতি-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হলো। এখন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারক পদে এক বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পাবেন।

এর আগে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারক পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বিধান ছিল। অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য চাকরি ও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের পর এটাই বিচারকদের চাকরি-সংক্রান্ত প্রথম আদেশ।

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করেই আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে শর্ত শিথিলের এ গেজেট প্রকাশ করা হয়।

জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা-বিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলি) বিধিমালা, ২০০৭’-এ জেলা জজ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারক পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।

ক্রান্তিকালীন সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এক বছরের জন্য জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারক পদে পদোন্নতি দিতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে বলে উপসচিব (প্রশাসন-১) মাহবুবার রহমান সরকার স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিধিমালার বিধি-৪-এ জনস্বার্থে যোগ্যতা শিথিল করে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে।

বর্তমানে জেলা জজের ৫৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া জেলা জজদের পদমর্যাদা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালিত আরও ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিলেছে। এখন এসব ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। সে হিসেবে প্রায় জেলা জজের ১০০টি পদ শূন্য। এ কারণে বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির প্যানেল তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্যানেল তৈরির জন্য ইতিমধ্যে ১৪৮ জন অতিরিক্ত জেলা জজের এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) সংগ্রহের কাজ শেষ পর্যায়ে। শর্ত শিথিলের পর প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় এখন পদোন্নতি প্যানেল তৈরি কাজ চুড়ান্ত হলেই জেলা জজের এসব শূন্য পদ পূরণ করা হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় বলেছে।

গত ১২ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিচারিক কাজে অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিলের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শর্ত শিথিল করে এক বছর করার কথা বলা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য ওই শর্ত শিথিল করে ৬ মাস করার কথা বলা হয়েছিল।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা অনুযায়ী জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে দুই বছর বিচারিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। আর সব মিলিয়ে মোট চাকরির সময়কাল হতে হবে ১৫ বছর। কিন্তু প্রেষণে প্রশাসনিক কোনো দায়িত্বে নিযুক্ত থাকলে অনেক সময় চাকরির সময়কাল ১৫ বছর হলেও বিচারিক কাজে অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ হয় না। এ কারণে শর্ত শিথিলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

জুডিশিয়াল সার্ভিস পদোন্নতি বিধিমালার ৪ ধারার উপধারা (৪)(এ) ধারায় শর্ত শিথিলেরও সুযোগ রয়েছে। বিধিমালার ৪ ধারার উপধারা-৪(এ) বলা হয়েছে, ‘(নিয়োগকারী) কর্তৃপক্ষ সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রকাশিত আদেশ দ্বারা তফসিলের প্রথম অংশে উল্লিখিত কোনো পদের বিপরীতে উল্ল্লিখিত যোগ্যতা জনস্বার্থে শিথিলক্রমে পদোন্নতি দান করিতে পারিবেন।’ এ বিধি অনুযায়ী ২০১৬ সালে তখনকার বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় বিচারিক কাজে অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করে দুই বছরের জায়গায় ৬ মাস করার কথা বলা হয়।

কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। গত নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে মন্ত্রণালয় থেকে ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এক বছর করা হয়।

নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম