গ্রেপ্তার হওয়া ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম (ডানে)

বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে উধাও ভূমি কর্মকর্তা কারাগারে

প্রায় ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মো.আবু বকর ছিদ্দিক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পিরোজপুর জেলা জজ আদালতের পিপি খান মো. আলাউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খান মো.আলাউদ্দিন জানান, সকাল সারে এগারোটার দিকে পিরোজপুর জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠনোর নির্দেশ দেন।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পিরোজপুর সার্কিট হাউসের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমের সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে।

বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডল বাদী হয়ে এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় (কিশোরগঞ্জ মডেল থানার মামলা নং-৩১, তারিখ ১৭.০১.২০১৮) দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মো. সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, সেতাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সে সময় অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদিত ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আহমদ ছিদ্দীকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেতাফুল ইসলামকে পিরোজপুরে পদায়ন করা হয়েছিল। ১৩ ডিসেম্বর তিনি পিরোজপুরে যোগদান করে চলে যান। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। পিরোজপুরের পরে তাঁকে ভোলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হয়েছিল। সর্বশেষ তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।’

জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের প্রায় ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে পালিয়ে যান সেতাফুল ইসলাম। এর মধ্যে পরপর দুই দিনে তিনি সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে গেছেন। এর আগে তিনি প্রায় আট কোটি টাকা সরিয়ে নেন। এ ছাড়া আরও ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য ব্যাংক চেক তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি পালিয়ে যান। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সেতাফুল ইসলামের আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাঁকে খুঁজে না পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

গত ৩ ডিসেম্বর সেতাফুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পিরোজপুরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর তিনি পিরোজপুরে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম