আনসার বিদ্রোহ: খালাসপ্রাপ্তদের চাকরিতে পুনর্বহাল নিয়ে রায় ২ আগস্ট
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

আপিল বিভাগে বিচারক সংকট, কমেছে বেঞ্চের সংখ্যা

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক সংকট এখনও কাটেনি। গত এক বছরে ৫ জন বিচারপতির পদ শূন্য হলেও নতুন কোনো বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ১৯৯৫ সালের পর আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ মাত্র চারজন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারকের অভাবে আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে একটি করা হয়েছে।

আইনজ্ঞরা মনে করেন, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে দ্রুত বিচারক নিয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। অন্যথায় আপিল বিভাগে মামলার জট ক্রমশ বাড়তেই থাকবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আপিল বিভাগে নিয়মিত দুটি বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি করা হতো। এর মধ্যে একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। দ্বিতীয় বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন সদ্য পদত্যাগী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা। গত তিন মাসে প্রধান বিচারপতি এবং পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দু’জন পদত্যাগ করেছেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১০ নভেম্বর এবং বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা ২ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আপিল বিভাগে বর্তমানে চারজন বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতিসহ অন্যরা হলেন- বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, সাত বছর আগেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। গত বছরের শুরুতেও আপিল বিভাগে ৯ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ১ জানুয়ারি বিচারপতি বজলুর রহমান ছানার মৃত্যুর পর আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জনে। পরে ১৪ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও ৭ জুলাই বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা অবসরে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা ৬ জনে নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আপিল বিভাগে কোনো বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে আপিল বিভাগের আরও দু’জন বিচারপতি পদত্যাগ করেন।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আপিল বিভাগে ১৬ হাজার ৫৬৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারকের অভাবে আপিল বিভাগের তিনটি বেঞ্চের দুটিতে তালা ঝুলছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানিও ২০০৯ সালে বন্ধ থাকা দুটি বেঞ্চের একটি বেঞ্চে হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি ইতিমধ্যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। শিগগিরই তিনি উচ্চ আদালতেও বিচারক নিয়োগ দেবেন। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন।

একই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আপিল বিভাগে আগে দুটি বেঞ্চে মামলা পরিচালনা হতো। বিচারকের অভাবে একটি বেঞ্চে এখন মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এতে উচ্চ আদালতে মামলা জট তীব্র আকার ধারণ করছে।

সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনজন বিচারপতি নিয়ে আপিল বিভাগে বিচারকাজ শুরু হয়। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ১১ জনে উন্নীত করে সরকার। ১৯৯৫ সালে আপিল বিভাগে চতুর্থবারের মতো বিচারক সংকট দেখা দিয়েছিল। এর আগে ১৯৭৩, ১৯৭৮ ও ১৯৮৫ সালে আপিল বিভাগে চারজন করে বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সমকাল