মালদ্বীপে দুই বিচারপতিকে গ্রেপ্তারের পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রত্যাহার

দুই বিচারপতিকে গ্রেফতার ও রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট।

বিরোধী দলীয় ৯ রাজনীতিককে মুক্তির আদেশ দিয়ে জারি করা রুলটি মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চের বাকি ৩ বিচারপতি।

এদিকে সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সরকার বিরোধীরা। সরকারের চাপেই আদালত আদেশ প্রত্যাহার করেছে বলে অভিযোগ করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের দল এমডিপি।

গত ০১ ফেব্রুয়ারি মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট বিরোধী ৯ নেতার বিরুদ্ধে আনা সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। এছাড়া গত বছর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বরখাস্ত হওয়া বিরোধীদলের ১২ সংসদ সদস্যকেও পুনর্বহাল করার আদেশ দেওয়া হয়। এসব আদেশ বাস্তবায়ন হলে প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন অভিশংসিত হতে পারেন বলে গুঞ্জনের মুখে বাতিল করা হয় সোমবারের ঘোষিত পার্লামেন্ট অধিবেশন। জারি করা হয়, রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা। গ্রেফতার হন প্রধান বিচারপতি আব্দুল্লাহ সাঈদ ও বিচারপতি আলি হামিদ। মঙ্গলবার দুই বিচারপতি গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় আদেশ বাতিল করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বাকি তিন বিচারপতি।

বিবৃতিতে বলা হয়, মালদ্বীপের ‘প্রেসিডেন্ট যে উদ্বেগ জানিয়েছেন তা আমলে নিয়ে আদেশটি প্রত্যাহার করা হলো’।

নাশিদের দল মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) আদালতের সিদ্ধান্ত পাল্টানোকে সরকারের চাপের প্রভাব বলে উল্লেখ করেছে। এমডিপির মুখপাত্র হামিদ আব্দুল গফুর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘মূল সিদ্ধান্তটি বাতিল করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন চাপ দিয়েছেন।’

সোমবার মালদ্বীপ সরকার দেশে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে সংসদ স্থগিত করে দে্ওয়ার পরপরই শুরু হয় ধরপাকড়। আটক হন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের সৎ ভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুম। তার বিরুদ্ধেও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ সাঈদ ও আরেক বিচারপতি আলী হামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত বা কোনও অভিযোগ আনা হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। এদিকে দুই বিচারপতিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিরোধী দলের পক্ষ নেওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।

১৫ দিনের জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়বে কিনা তা নিয়ে এরইমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা যেন স্থায়ী রুপ না নেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক দিনুশিকা দিসানায়েক বলেন, ‘মালদ্বীপের কর্তৃপক্ষ এর আগেও বাকস্বাধীনতা উপর আঘাত এনেছে। বিগত কয়েকবছরে প্রতিপক্ষকে চুপ রাখতে বেশ কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা।’ এবার জারিকৃত জরুরি অবস্থাকে যেন নিপীড়নের লাইসেন্স না বানানো হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তিনি। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান