বইমেলায় কুষ্টিয়ার তরুণ আইনজীবী সিরাজ প্রামাণিকের তিন গবেষণা গ্রন্থ

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের তরুণ আইনজীবী, গবেষক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা সিরাজ প্রামাণিক এর এবার একুশের গ্রন্থমেলায় তিনটি আইনগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিখ্যাত আইনগ্রন্থ প্রকাশনী সংস্থা কামরুল বুক হাউজ প্রকাশ করেছেন ‘অত্যাচার, যৌনাচার বনাম আইনগত প্রতিকার’। ‘নারী পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার সবচেয়ে সপ্রান বস্তু। পুরুষ নারীকে আজো বস্ত, উপভোগ্যতম বস্তু বলেই গণ্য করে। দিকে দিকে তাকে নিষিদ্ধ করে রাখতে চায় এবং তার জন্য নিষিদ্ধ রাখতে চায় সব কিছু। হুমায়ুন আজাদ স্যারের মতো এ বইয়ের লেখকও বিশ্বাস করে নিরন্তর বিকশিত হওয়ার নামই মনুষ্যত্ব। নারীর প্রতি নানা অনাচার, অত্যাচার, নির্যাতন, বৈষম্য নিয়ে আইনাঙ্গনের নানা গল্প ও আইনী সমাধানের চেষ্টা রয়েছে এ বইটিতে। আইনাঙ্গনে আসা নারীদের জীবনচিত্র, তাদের ভোগান্তির কথা, কষ্টের কথা, অজ্ঞতার কথা অতি নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ বইটিতে মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে, তালাক, দেনমোহর, হত্যা, ধর্ষণ, যৌতুক, বিষয়গুলো নানা অনুষঙ্গ হয়ে লেখকের হৃদয়ে ধরা দিয়েছে। কামরুল বুক হাউজের ২৩৮ ও ২৩৯ নং ষ্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

‘ধর্ষণ মামলা পরিচালনার কলা-কৌশল’ বইটি প্রকাশ করেছেন শরফুদ্দিন ল’ বুক কোম্পানী। মানব জাতির শুরু থেকেই নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছেন। পুরুষ শাসিত সমাজে ধর্ষিতার জন্য যেসব আইন রয়েছে; সেগুলোতে ধর্ষিতার অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা রীতিরকম দৃশ্যমান। এ বাস্তবতার নিরিখেই লেখকের এ বইটি। আমাদের দেশে বাস্তব কেইস স্টাডি সম্বলিত শুধুমাত্র ধর্ষণের উপর আইন বইয়ের বেশ অভাব রয়েছে। তার উপর এ বিষয়ে উপমহাদেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তগুলো একত্রে পাওয়াও দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ বইটিতে লেখক অনেকটায় স্বতন্ত্র অবস্থান করে নিয়েছেন। সাধারণ পাঠকসহ গবেষক, আইনজীবী, আইনের ছাত্র-ছাত্রী, পুলিশ এবং বিচারক তথা আইন সংশ্লিষ্ট সবারই এ বইটি কাজে আসবে বলে সকলের ধারণা।

‘স্বীকারোক্তি ও দোষস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু’ বইটি প্রকাশ করেছেন সুরভী বুক হাউজ। দোষস্বীকারোক্তি একটি ভয়ঙ্কর শব্দ, যদি তা হয় ভীতিপ্রদর্শণপূর্বক। একটি দেশে, একটি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আইন সম্পর্কে সচেতনতা। যে সমাজে আইনের শাসন নেই, সে সমাজ সভ্য বলে বিবেচিত নয়। একটি সচেতন জনগোষ্ঠীই পারে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু এখানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার তথা মানবাধিকার-এ ধারণাগুলো প্রকৃতরুপে বিকশিত হতে পারেনি। এ বাস্তবতার নিরিখেই ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অপপ্রয়োগ নিয়ে লেখকের এ লেখা। আশা করি, এ বইখানি দেশে আইন ও মানবাধিকার সচেতন একটি জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে অবদান রাখতে পারবে। তাঁর লেখায় অনুসন্ধান ও গবেষণা যেমন প্রাধান্য পেয়েছে, তেমনি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা নিয়ে বাস্তব চিত্রও তিনি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। এটা নিঃসন্দেহে লেখকের দূরদৃষ্টি ও অভিজ্ঞতার ফসল। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বইটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।