ফায়ার সার্ভিস-রেলওয়ে-ওয়াসার ডিজির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল

রাজধানীর শাজাহানপুরে পরিত্যক্ত পাইপে পড়ার পর উদ্ধার তৎপরতায় অবহেলার কারণে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আদেশ পালন না করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক আবেদন শুনানি করে আজ বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে. এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো.আব্দুল হালিম।

জারি করা রুলে ক্ষতিপূরণের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে এবং ওয়াসার মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার অভিযোগ কেন আনা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এর আগে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়া হয়। রায়ে সংশ্লিষ্টদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে এই টাকা শিশু জিহাদের পরিবারকে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা ওই আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। গত ১ জানুয়ারি এ সময় অতিবাহিত হয়েছে। তারপর তাদেরকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দিলেন।

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট রায় দেন। এর আগে এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন একই বেঞ্চ।

একই সঙ্গে জিহাদের মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে ও সিটি কর্পোরেশনের অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সারাদেশে কতগুলো অরক্ষিত পাইপ, ঢাকনাবিহীন পাইপের গর্ত ম্যানহোল ও পয়ঃনিস্কাশন পাইপ রয়েছে- তার একটি তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চান আদালত।

পাশাপাশি আগের দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে এবং ট্রেনিং করেছে তার তথ্য গত বছরের ১৫ মের মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা কয়েকশ ফুট গভীর একটি নলকূপের পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।

এরপর উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর কয়েক মিনিট পর কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।