দেশে এক মামলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ফাঁসির আদেশের দ্বিতীয় নজির

আওয়ামী লীগ নেতা একরাম হত্যার দায়ে ৩৯ জনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়েছে। এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে এত মানুষের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম। আর এক মামলায় এত বেশিসংখ্যক আসামির ফাঁসির আদেশের ঘটনা বাংলাদেশে দ্বিতীয়। বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যার ঘটনায় ১৩৯ জনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়। নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয় ২৬ জনকে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেলসহ ৩৯ জনের মৃত্যু দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি একরামুল হককে প্রকাশ্যে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদি হয়ে বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। আদালত বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীসহ ১৬ জনকে খালাস দিয়েছে। এ মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম মিষ্টারসহ ৩৬ আসামি কারাবন্দী রয়েছেন। যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে তারা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। চার্জশিটভুক্ত ৫৬ আসামির মধ্যে ইতঃমধ্যে রুটি সোহেল নামের এক যুবলীগ কর্মী র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। একরাম হত্যার ঘটনা নিয়ে ওই সময় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একজন মানুষকে গুলি করে, কুপিয়ে, আগুনে পুড়ে হত্যার ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই ঘটনায় অনেক রাঘববোয়ালের নাম ওঠে এলেও পুলিশের তদন্তে তারা বাদ পড়ে যায়। এ নিয়েও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় এত আসামিকে একসাথে ফাঁসির আদেশ দেয়ার ঘটনা এই প্রথম। একই সাথে নিজ দলের নেতাকে হত্যা করে এতজনের একসাথে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্তির ঘটনাও বাংলাদেশে এই প্রথম।

এর আগে পিলখানায় বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় নিম্ন আদালতে ১৫২ জনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়। পরে উচ্চ আদালতে ১৩৯ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় ২৬ জনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। সাত খুনের মামলায় যাদের ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়েছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও রয়েছেন। এর আগে বিএনপি নেতা বাবর হত্যা মামলায় এক আদালত ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ২০১৬ সালে। নড়াইলের ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষ রায় হানু হত্যার অভিযোগে গত ১৪ জানায়ারি ৯ জনের ফাঁসির আদেশ হয়। এর আগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাপ্রচেষ্টা মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন একটি আদালত।