উচ্চশিক্ষিত হলেও নারীকে চাকরি করতে বাধ্য করা যাবে না: বম্বে হাইকোর্ট
বম্বে হাইকোর্ট

শারীরিক সম্পর্ক না থাকায় ৯ বছরের বিয়ে বাতিল করল বম্বে হাইকোর্ট

বিয়ের পরে কেটে গিয়েছে ৯ বছর। কিন্তু একবারের জন্যও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। এই যুক্তিতেই বিয়ে বাতিল বলে ঘোষণা করল বম্বে হাইকোর্ট। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের বাসিন্দা এক দম্পতির বিয়ে সংক্রান্ত মামলায় এই রায়ই দিয়েছেন বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি মৃদুলা ভাটকর। কার্যত বিয়ের দিন থেকেই ওই দম্পতির আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল। বিয়ে বাতিলের আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্ত্রী। তাঁর অভিযোগ ছিল, ভুয়ো কাগজে সই করিয়ে তাঁকে বিয়ে করেছে তাঁর স্বামী। ফলে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন।

প্রতারণার অভিযোগকে মান্যতা না দিলেও ওই দম্পতির মধ্যে যে একদিনের জন্যও শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়নি, তা মেনে নেন বিচারপতি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিচারপতি বলেন, ‘‘বিবাহিত জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। আর এই ধরনের সম্পর্কে তা না থাকলে, বিয়ের উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যায়। একবারের জন্য শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হলেও সেই বিয়ে পূর্ণতা পায়।

যে মহিলা বিয়ে থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন, তাঁর স্বামীর অবশ্য দাবি ছিল যে দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এমনকী, তাঁর স্ত্রী অন্তসত্ত্বাও হয়েছিলেন। যদিও, এই দাবির স্বপক্ষে আদালতে চিকিৎসকের রিপোর্ট বা অন্য কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেননি ওই ব্যক্তি। আদালতও মেনে নেয় যে ওই দম্পতি একটি দিনের জন্যও একসঙ্গে থাকেননি।

আদালত অবশ্য দু’পক্ষকে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়ে একসঙ্গে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। যদিও, সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির দাবি, বিচারপতি রায় দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পরস্পরের প্রতি দু’জনেই প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব পোষণ করছেন। এই বিয়ের ফলে দু’জনের জীবনেরই ন’টি বছর নষ্ট হয়েছে। এই বিয়ে টিকিয়ে রাখলে ভবিষ্যতেও দু’জনের জীবনের আরও অনেকগুলি বছর নষ্ট হবে। কোনও সম্পর্ক বাঁচিয়ে তোলা যাবে না— বিয়ে বাতিলের জন্য স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে এমন সংস্থান না থাকলেও, দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক না থাকাটা বিয়ে বাতিলের একটি কারণ হতে পারে।’’

জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে ওই দম্পতির রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। স্ত্রীর বয়স তখন ছিল ২১, স্বামীর ২৪। মহিলার অভিযোগ, তাঁর অজান্তেই সাদা কাগজে সই করিয়ে তাঁকে ম্যারেজ রেজিস্ট্রিারের কাছে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করা হয়েছিল। এর পরেই তিনি বিয়ে বাতিলের আবেদন জানিয়ে মামলা করেন।

নিম্ন আদালত প্রথমে ওই মহিলার পক্ষেই রায় দিয়ে বিয়ে বাতিল করে দেয়। কিন্তু আপিল কোর্টে জিতে যান স্বামী। এর পরে বম্বে হাইকোর্টে মামলা করেন স্ত্রী। হাইকোর্ট অবশ্য মহিলার প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে জানায়, একজন শিক্ষিত এবং স্নাতক পাশ মহিলা হয়ে তিনি বিয়ের কাগজে সই করে বুঝতে পারেননি, এই দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়।