পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার

হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর হামলা জাতিগোষ্ঠি নির্মূলের চেষ্টা: পাক প্রধান বিচারপতি

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার দেশটির সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাকে একটি ‘জাতিগোষ্ঠি নির্মূল’ করার চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন। খবর বিবিসির।

সাম্প্রতিক এক হামলার শুনানির সময় এক মন্তব্যে তিনি বলেছেন হাজারাদের প্রতি ‘সহিংসতার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আদালতের নেই।’

পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক জাতীয় কমিশনের মার্চ মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় গত পাঁচ বছরে শিয়া হাজারা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো বিভিন্ন হামলায় অন্তত ৫০৯ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে ৬২৭ জন।

হাজারা সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, তাদের হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। হাজার হাজার হাজারা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

কারা এই হাজারা?
হাজারারা মঙ্গোলিয়া ও মধ্য এশীয় বংশোদ্ভুত। প্রবাদ আছে হাজারারা চেঙ্গিস খান ও তার সৈন্যদের বংশধর। চেঙ্গিস খান ১৩ শতকে আফগানিস্তান দখল করেছিল।

সুন্নি প্রধান আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে এরা মূলত শিয়া ইসলামে বিশ্বাসী। এদের মধ্যে অন্তত ৬ লাখ বাস করে কোয়েটায় এবং এদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান থেকে এসে সেখানে বসতি গেড়েছে। শিয়াদের জন্য ইরানে অবস্থিত পবিত্র এক ধর্মীয় স্থানে যাবার পথে পড়ে কোয়েটা।

কী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন হাজারারা
পাকিস্তানে যে ছয় লাখ হাজারা সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বাস করেন দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমে বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা অঞ্চলে, সেখানে গত কয়েক দশক ধরে জাতিগত উগ্রবাদীরা হাজারাদের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাচ্ছে এবং তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে বন্দুক হামলা করছে।

বেলুচিস্তান শিয়া কনফারেন্সের সভাপতি দাউদ আগা বলছেন, ‘শিশুরা অনাথ হচ্ছে, নারীরা বিধবা হচ্ছেন, কিন্তু তারপরেও আমরা আমাদের ধর্ম বিশ্বাস কখনোই ছাড়ব না।’

হামলার ঘটনা এড়াতে হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ এখন মূলত একই এলাকায় জোটবদ্ধভাবে থাকেন। কিন্তু সেসব এলাকা পরিণত হয়েছে কার্যত জেলখানায়।

পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সহিংসতা ঠেকাতে তাদের এলাকা ঘিরে দেয়াল তুলে দিয়েছে। শহরের অন্যান্য অংশ থেকে তাদের এলাকায় ঢোকার পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং রাস্তা বরাবর বসিয়েছে সেনা চৌকি।

হাজারারা শহরের এ রকম দুটি অবরুদ্ধ এলাকায় এ করকম কয়েদীর জীবন যাপন করছেন। সেখানে তারা এক ধরনের সুরক্ষা পেলেও শহরের অন্যান্য অংশে হাজারাদের ওপর এখনও হামলা অব্যাহত রয়েছে।

ওই এলাকার একজন বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ মুসা বলছেন, ‘আমরা শহরের আরও কোন অংশে যেতে পারি না, আমরা ব্যবসাপাতি করতে পারি না। আমরা খাঁচায় বন্দীর মতো দিন কাটাচ্ছি।’

একসময় শহরের প্রধান বাজারে বেশিরভাগ দোকানপাট ছিল হাজারাদের। এখন সেসব বেশিরভাগ দোকান মালিকরা তাদের ব্যবসা তুলে এনেছেন অবরুদ্ধ দুটি এলাকার মধ্যে।

মুসা বলছেন, এই সহিংসতার জন্য দায়ী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। ‘হাতে গোণা কিছু সন্ত্রাসীকে সরকার যদি মোকাবেলা করতে না পারে তাহলে তারা নিজেদের সরকার বলে কীভাবে?’

হাজারাদের ছেলেমেয়েরাও অবরুদ্ধ দুটি এলাকার মধ্যে হতাশ জীবন যাপন করছেন।

বিবিসির পাকিস্তান সংবাদদাতা সেকেন্দার কিরমানিকে এদের অনেকেই বলেছেন ভয়ে তারা এক এলাকা থেকে এমনকী অন্য এলাকাতেও যেতে পারেন না। লেখাপড়া, খেলাধুলা সবকিছুতেই তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ কমে গেছে।

যে দুটো এলাকায় তারা অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন, তার বাইরে কোয়েটার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাজারাদের উপস্থিতি গত কয় বছরে নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।