চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে কঠোর আইন হচ্ছে

 

চলন্ত ট্রেনে এখন বড় আতঙ্কের নাম ‘পাথর নিক্ষেপ’। প্রচলিত আইন দিয়ে কোনোভাবেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চলন্ত ট্রেনে পাথর বা ঢিল নিক্ষেপ বন্ধ করতে কঠোর আইন করতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ আইনে জরিমানার পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে শাস্তির বিধান। উল্লেখ্য, গত এক বছরে দেড় শতাধিক ঘটনায় ট্রেন যাত্রী ও রেল কর্মচারীসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল খুলনায় দায়িত্বরত অবস্থায় মারাত্মক আহত হন টিআই (সি) শিকদার বায়েজিদ। তিনি এখন রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। এর আগে সীতাকুণ্ডে পাথরের আঘাতে প্রীতিদাস নামে একজন প্রকৌশলী মারা যান। রেল সূত্র জানায়, পাথর বা ঢিল ছোঁড়ার বেশি ঘটনা ঘটছে দেশের ২০ জেলায়। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৫টি জেলা এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১৫টি জেলা রয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, চলন্ত ট্রেনে পাথর বা ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বন্ধে কঠোর আইন করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, গত বছর ১৪ জন রেলকর্মী পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হয়েছেন। রেলপথ সচিব বলেন, বছরে গড়ে ১৫০টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পাথর নিক্ষেপে দরজা-জানালার কাচ ভাঙার দুই হাজার ঘটনা ঘটেছে। আর পাথরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রেলের নির্মাণ খরচ বছরে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে রেলের পূর্বাঞ্চলের ৩৬ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ স্পটে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সচিব বলেন, এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারলে ট্রেনের ক্ষতির পাশাপাশি কর্মরত বা ভ্রমণকারীরা হতাহত হতে পারেন। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমাদের জন্য সব সময় এটা চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, চলন্ত রেলে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি। ভারতেও প্রতি মাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। লোকাল বা মেইল ট্রেনে লোকবল কম বা অন্যান্য কারণে আমাদের নিরাপত্তা নেই। সব স্টেশনে পুলিশ নেই। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, বায়েজিদ শিকদারের ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামি ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় সচেতনতা তৈরিতে ফিচার তৈরি করে মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে জানিয়ে আবুল কাশেম বলেন, সচেতনতা কর্মসূচি আরো জোরদার করতে হবে। শাস্তির পরিমাণও বাড়ানো যেতে পারে।

এ দিকে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে গত বৃহস্পতিবার রেল ভবনের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে ফ্যান, মিডিয়া কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রেলওয়ে এবং যাত্রীদের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান।

এ সভায় জানানো হয়, পাথর ছোঁড়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩১ ডিসেম্বর ১২ জেলা প্রশাসককে রেল মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি ১৭ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্ভুক্ত করে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে ভূমিকা নিতে চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইমামদের ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রেলে পাথর নিক্ষেপ রোধে জনগণকে সচেতন করতে গত ৯ মে রেল সচিব ১৪ ডিসিকে ডিও পত্র দিয়েছেন। সভায় উপস্থিত রেলফ্যানের পক্ষ থেকে মাহবুব বলেন, দ্রুত জিডি করা এবং লোকেশন চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সভায় মিডিয়া কর্মীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সচেতনতার জন্য ঘটনাপ্রবণ এলাকায় মাইকিংসহ বেশি প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ইত্তেফাক