‘নীলস বাংলাদেশ’ আইন শিক্ষাঙ্গনে আলোকিত নাম

 

সারা বিশ্বে আইন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি অর্গানাইজেশন হল “দ্যা নেটওয়ার্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল ল স্টুডেন্টস” (নীলস); আইন ভিত্তিক এই অর্গানাইজেশনটির বিশ্বের ৬টি মহাদেশের ২৬টি দেশে চ্যাপ্টার আছে। তার মধ্যে “নীলস বাংলাদেশ” অন্যতম। নীলস আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা, প্রতিযোগিতা, ডেলিগেশন প্রোগ্রাম, রেসিডেন্সিয়াল স্কুল প্রোগ্রাম, আইনি সহায়তামূলক কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার মাধ্যমে আইন শিক্ষায় অবদান রেখে চলছে।

গত এক বছরে “নীলস বাংলাদেশের” সাফল্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলো হচ্ছে-

“দ্য নেটওয়ার্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল ল স্টুডেন্ট” কর্তৃক বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ঘোষণার পর প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালের ১৯ মে বাংলাদেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৪০০ জন আইনের শিক্ষার্থী বাছাই করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ. কে খান আইন অনুষদ অডিটোরিয়ামে “লিগ্যাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট” নামক দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন জগতে আইন বিষয়ক অর্গানাইজেশন হিসেবে “দ্য নেটওয়ার্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল ল স্টুডেন্ট বাংলাদেশ” সংক্ষেপে “নীলস বাংলাদেশ” এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

সফলভাবে প্রথম ওয়ার্কশপ আয়োজনের পরেই অক্টোবর মাসে আরেক চমক নিয়ে উপস্থিত হয় “নীলস বাংলাদেশ”। দেশের ২৪টি পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে শুধুমাত্র আইনের ছাত্রছাত্রীদদের আইন নিয়ে বিতর্কে অনুপ্রেরণা দিতে বাংলাদেশ আইনাঙ্গণের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় দুইদিন ব্যাপী “ন্যাশনাল লিগ্যাল ল ডিবেট চ্যাম্পিয়নশীপ-২০১৭” । যার দৃষ্টি নন্দন থিম ছিল- ‘কালার ইউর লাইফ উইথ ল এন্ড লজিক’।

অক্টোবর শেষ হতে না হতেই নভেম্বর মাসে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহায়তায় ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘লিগ্যাল রিসার্চ এন্ড অ্যাডভোকেসি স্কিল’ নামক ওয়ার্কশপ আয়োজন করে আইন বিষয়ক অর্গানাইজেশন হিসেবে সারাদেশে দারুণ সুনাম অর্জন করতে থাকে “নীলস বাংলাদেশ”।

সেই সাথে শুরু হয় নীলস- এর নিবন্ধিত সদস্যদের জন্য বেসিক স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট “৩ মাসব্যাপী নিলস মুট কোর্ট সেশন”। আইনের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ব্যাপক সাড়া জাগানো জনপ্রিয় এই প্রজেক্টের প্রথম পর্ব সফলভাবে শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ডিসেম্বর মাস থেকে।

এছাড়াও, ২০১৭/১৮ সেশনে “নীলস বাংলাদেশ”র আরেক প্রশংসিত উদ্দ্যোগ ছিল “নিলস লিগ্যাল এওয়ারনেস প্রোগ্রাম”। আইন বিষয়ক সচেতনতা গড়তে এই প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১২ শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমাজ সচেতনতামূলক আইনগত বিষয় নিয়ে মৌলিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় “নীলস বাংলাদেশ”।

সাল ২০১৮, নতুন বছরে আবারও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হাজির “নীলস বাংলাদেশ”। সারাদেশ থেকে ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ বাছাইকৃত আইনের শিক্ষার্থী নিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইনের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা বিষয়ক ঐতিহাসিক ও বৃহত্তম কর্মশালা “ক্যারিয়ার অপরচুনিটি: ওয়ে টু থ্রাইভিং লিগ্যাল ইন্ডাস্ট্রি” আয়োজন করে। যার সহযোগিতায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ। প্রথমবারের মত এই ইভেন্টের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুবিধা দেয়া হয় বিভিন্ন অর্গানাইজেশন এবং ল ফার্মে।

জানুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহায়তায় ব্যাপক সাড়া জাগানো ওয়ার্কশপ ‘লিগ্যাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্কিল’ এর ২য় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ওয়ার্কশপে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি এস. এম. মজিবুর রহমানসহ অনেক আইন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যখন গণহত্যা চলছিল ঠিক তখনই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ‘নীলস সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি চ্যাপটার’ গত ৪ঠা মার্চ ল এন্ড জাস্টিস বিভাগের সহযোগিতায় ‘জেনোসাইড এগেইনেস্ট রোহিঙ্গা’ বিষয়ের ওপর পোস্টার প্রেজেন্টেশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে দেশের বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকগুলো দল অংশ নেয়।

এরপরই ২৯-৩১ মার্চ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ এবং নীলস বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়- ৩ দিন ব্যাপী “ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল ল”। উক্ত আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব আবু সালেহ শেখ জহিরুল হক এবং আন্তর্জাতিক আইনের দেশী ও বিদেশি ২৯জন আইনজ্ঞসহ আরও অনেকেই।

জাতীয় পর্যায় ছাড়াও বিগত এক বছরে “নীলস বাংলাদেশ” সারাদেশে স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেশন হিসেবে মুট কোর্ট, বিতর্ক, জুডিসিয়ারি প্রিপারেশন, লিডারশীপ বিল্ডিং, অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ারসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর একাধিক সেশন পরিচালনা করে বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

এসকল উদ্যোগের মাধ্যমে “নীলস বাংলাদেশ” আইনের ছাত্র, শিক্ষক, আইনবিদ এবং বাংলাদেশের বিচারকদের সাথে এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। “নীলস বাংলাদেশের” এই উদ্যোগসমূহে এখন পর্যন্ত সম্মানিত অতিথি, আলোচক এবং প্রশিক্ষক হয়ে আইনের ছাত্রদের বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেন খ্যাতিমান অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখারউদ্দিন চৌধুরী; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি এস. এম. মজিবুর রহমান; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান; ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান; অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা দায়রা জজ মাজদার হোসাইন; চবি আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর এবিএম আবু নোমান; ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. তুরিন আফরোজ; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি আইন বিভাগের সভাপতি ক্রিশ্চিন রিচার্ডসন; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক; সিনিয়র সহকারী আইন সচিব মাসুমা জামান; সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির আইন এবং সুশাসন বিভাগের ডিন ড. মো আসাদুজ্জামান; ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এম. এম. শহিদুল হাসান; জার্মানির ওল্ডেনবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ক্যাথরিনা হফম্যান; নয়াদিল্লির গুরু গোবিন্দ সিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমাল পাল সিং; চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আল ইমরান খান; চবি আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদ; মিডিয়া ব্যক্তিত্ব চ্যানেল ২৪ এর নিউজ প্রেজেন্টার এডভোকেট মাঞ্জুর আল মতিন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মনছুর আলম কাদেরী, অ্যাড. মোকাররমাস সাকলান; ব্যারিস্টার সোহান খানসহ আইন অঙ্গনের পরিচিত অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

২০১৭-১৮ সেশনে যুক্তরাজ্য, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, রোমানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এর মতো শক্তিশালী দেশের চ্যাপ্টার সমূহকে পেছনে ফেলে এই বছর সেরা ন্যাশনাল চ্যাপ্টার হিসেবে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে ‘নীলস বাংলাদেশ’।

এই প্রসঙ্গে নীলস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জনাবা নাসরীন সুলতানা বলেন, “আমরা নিজেদের মানসম্মত কাজ এবং আইন শিক্ষার্থীদের জন্য অবদানের অনুপ্রেরণা হিসেবে এই পুরষ্কার লাভ করি। সেই সাথে নীলস ইন্টারন্যাশনাল বোর্ডে প্রথমবারের মত কোন বাংলাদেশী (শেখ হাবিবুর রহমান- প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট, নিলস বাংলাদেশ) জেনেরেল সেক্রেটারি পদে নিয়োগ লাভ করেন, যেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।”