দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) - এর প্রধান কার্যালয়

কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ীর সম্পদের খোঁজে দুদক

প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে তালিকার দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর সম্পদের অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। কঠোর নজরদারিও চলছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের কাজ তদারকির জন্য দু’জন পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত পৃথক দুইটি টিম কাজ করছে।

ইতিমধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা তালিকায় থাকা মাদক ব্যবসায়ীদের নামে বেনামে গড়া বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন। প্রাপ্ত সব তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

দুদকের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের নির্ধারিত কার্যক্রমের আওতায় মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে যারা মাদক ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যাদের কারণে সমাজের সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে তাদের ব্যাপারে দুদক কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদের পাহাড়গড়া ১৪১ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দুদককে দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তৈরি করা রাজধানীর শীর্ষ ৮২ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা দুদক সংগ্রহ করেছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আরো ১১০জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা পেয়েছে দুদক। এর বাইরে দুদকের কাছে সরাসরি কয়েকজন কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। প্রাপ্ত এসব তথ্য বিশ্লেষণ করেছে দুদক। দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা শাখাও তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক যাচাই বাছাই শেষে সারাদেশের কোটিপতি প্রায় সাড়ে তিনশ’ মাদক ব্যবসায়ীর একটি খসড়া তালিকা করেছে দুদক। শিগগিরই এসব কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ করবে দুদক।

দুদক সূত্র আরো জানায়, এ তালিকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর পাশপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সহায়তা করে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দুদকের এ তালিকায় কক্সবাজার ও খুলনা এলাকার দুইজন সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে। এর বাইরেও দুদকের তালিকায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কয়েকজন রাজনীতিবিদের নামসহ বড় বড় ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। এসব ব্যবসায়ী ভিন্ন ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা করেন। দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসার অভিযোগ থাকা এধরনের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিককে দুদক সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। তারা যে সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছে সেটা যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে তারা সম্পদের বৈধ উত্স দেখাতে পারেননি। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়েরের জন্য শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়ে অনুমোদন চাওয়া হবে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে নিজ নামে, স্ত্রীর নামে, শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের নামে জমি-ফ্ল্যাট ক্রয় এবং ব্যাংকে কোটি টাকা গচ্ছিত রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বারিধারার সহিদুজ্জামান ওরফে নাভিদ, মোহাম্মদপুরের এশতিয়াক, মিরপুরের নজরুলসহ (গত রবিবার রাতে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে নিহত) ৩২জনের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কমিশন। এছাড়া নারায়নগঞ্জের শাহীন ওরফে বন্ধক শাহী, বজলুর রহমান, কক্সবাজারের শিলাবনিয়া পাড়ার হাজি সাইফুল করিম, টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজি মোহাম্মদ ইসলাম, প্যানেল মেয়র মজিবর রহমান, ওই পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রাকিব আহমেদ, টেকনাফের লামা বাজারের মিসেস উয়ালী, আলিয়াবাদের আব্দুস শুকুর, মিরবানিয়া পাড়ার হায়দার আলী, জালিয়া পাড়ার ফরিদ আহমেদ, টেকনাফের আমিন জিয়াউর রহমান, রাশেদ, সফিক, সাহেদুর রহমান, ফেনীর পেয়ার আহমেদ, ছালাহ উদ্দিন, জিয়াউর আলম, আমজাদ হোসেন, ইসমাইল হোসেন, লক্ষ্মীপুরের আলী হোসেন, শাহ আলম মিন্টু, ফরিদুপরের বোয়ালমারীর মিজানুর রহমানসহ রাজশাহীর ২২জন কোটিপতি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। শিগগিরই তাদের কাছে কমিশন থেকে সম্পদ বিবরণী চাওয়া হবে। ইত্তেফাক