জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দিনাজপুর

উত্তপ্ত দিনাজপুর: ডিসি অফিসে কর্মবিরতি, আইজীবীদের আল্টিমেটাম

আইনজীবীদের সাথে ডিসি অফিসের কর্মচারীদের সৃষ্ট ঘটনায় দিনাজপুর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীরা। ডিসি অফিসের কর্মচারীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালনের পাশাপশি বিক্ষোভ, মানবন্ধন অব্যাহত রেখেছেন। তাদের সাথে দিনাজপুরের বিভিন্ন দপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতি। মামলা প্রত্যাহারের জন্য এর আগে ৭২ ঘণ্টার পর আবারো ৪২ ঘণ্টার আল্টিমেটার দিয়েছেন আইনজীবী সমিতির নেতারা। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সুরাহার জন্য তারা জেলা প্রশাসনের সাথে কোন বৈঠকে বসবেন না। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।

আইনজীবীর হাতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুই কর্মচারী লাঞ্ছিত হওয়ার জেরে মঙ্গলবারও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ পালন করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন।

৩য় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি দিনাজপুর কালেক্টরেট শাখার সভাপতি আবু তাহেরে সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এনায়েত কাদেরের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতি দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন, ৪র্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি দিনাজপুর কালেক্টরেট শাখার সভাপতি শুকুর আলী, সাধারণ সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম, চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির জেনারেল হাসপাতাল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ মিয়া প্রমুখ।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট আমিনুর রহমান ও পিয়ন আব্দুস সালামকে পেটানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় কোতোয়ালি থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়।

এ মামলার বাদী হয়েছেন, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী আমিনুর রহমান।

কোতোয়ালি থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম জানান, দ্রুত বিচার আইনে ৭ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসআই রুহুল আমিনকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টায় দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামানের অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট মো. আমিনুর রহমানের কক্ষে সাত আইনজীবী মাহফুজুর রহমান খান বিপুল, রবিউল আলম রবি, মো. ফিবেল, মো. সাদিক আলম বিন নায়ের, মো. সুমন সরকার খোকা, মো. রঞ্জু এবং মো. খোকনসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন প্রবেশ করেন।এ সময় আইনজীবীদের সঙ্গে সহকারী আমিনুর ও পিয়ন আব্দুস সালামের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই কর্মচারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ওই সাত আইনজীবী।

সাত আইনজীবী আমিনুর ও সালামকে কিল-ঘুষি, লাথি, চড়-থাপ্পড় মারার একপর্যায়ে উভয়ে মেঝেতে পড়ে গেলে সে অবস্থায়ও বেদম পেটানো হয়। তাদের চিৎকারে আশপাশের রুমের কর্মচারীরা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় সহকর্মীরা আমিনুর ও সালামকে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামান এজলাস থেকে নেমে এসে আহত দুই কর্মচারীকে দেখে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ঘটনার পর দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কাজকর্ম বন্ধ করে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে আইনজীবীদের পক্ষে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার আহম্মেদ বাবু জানান, ২৩ মে বিকাল ৪টার দিকে এ্যাডভোকেট রবিউল আলম তার মোটরসাইকেলযোগে ডিসি অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দিনাজপুর শহরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সেসময় বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে রবিউল আলম ডিসি অফিসের গাড়ি রাখার পেছনে ছাদের নিচে অবস্থান নেন। এসময় ডিসি অফিসের কর্মচারী সালাম অ্যাডভোকেট রবিউলকে ধমক দিয়ে পেছন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। রবিউল নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দেন। কিন্তু কর্মচারী সালাম অ্যাড. রবিউলকে বলেন সরে না গেলে গাড়ি দিয়ে চাপা দেবে। রবিউল আলম নিজের মানসম্মান রক্ষার্থে সেইখান থেকে কিছু না বলে চলে যান।

পরের দিন ২৪ শে মে দুপুর ১টার দিকে অ্যাড. রবিউল তার কাজে ডিসি অফিসে গেলে কর্মচারী সালামের সাথে দেখা হয়। সালাম তাকে দেখামাত্র কটূক্তি করা শুরু করলে অ্যাড. রবিউল প্রতিবাদ করেন। তখন ডিসি অফিসের এডিএমের সিএ আনিসুর রহমানসহ ১২/১৩ জন স্টাফ দৌঁড়ে আসে এবং রবিউলকে ঘেরাও করে অপমানজনক কথাবার্তা বলতে থাকেন। এ সময় রবিউল দিনাজপুরের এডিএমকে এই বিষয়ে জানালে এডিএম বলেন, তিনি ব্যস্ত, কাজ করে বিষয়টি দেখবেন বলে রবিউলকে জানান। রবিউল তখন বের হয়ে আসতে থাকা অবস্থায় আবার সালাম, আনিসুরসহ ডিসি অফিসের ১২/১৩ জন স্টাফ অ্যাড রবিউলকে ঘিরে ধরে এবং আনিসুর রহমান বলে যে এডিএম ছেড়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে, আমরা তোকে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখি বলে আইনজীবীকে লাঞ্ছিত করতে থাকে। এইরূপ হইচই দেখে অন্যান্য আইনজীবীরা রবিউলকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলে স্টাফরা আইনজীবীদের সাথে চরম বাকবিতণ্ডা ও দুর্ব্যবহার করে। আইনজীবীরা স্টাফদের প্রবল শারীরিক আক্রমণের সম্মুখে অবরুদ্ধ রবিউলকে উদ্ধার করে জেলা আইনজীবী সমিতিতে নিয়ে আসেন। আইনজীবীরা ডিসি অফিসের স্টাফদের কাউকে আক্রমণ না করলেও তারা উদ্ধারকারী আইনজীবীদের মাদকসেবী, জঙ্গি ও নাশকতাকারী দাবি করে বিচারের চেয়ে বের হয়ে মিছিল করতে থাকেন।