লিডস ক্রাউন্ট কোর্ট

মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় অভিযুক্ত বাংলাদেশি বাবা-মা

মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার দায়ে যুক্তরাজ্যের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাংলাদেশি বাবা-মা। ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে তাঁরা বাংলাদেশে নিয়ে আপন চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। মঙ্গলবার (২৯ মে) লিডস ক্রাউন্ট কোর্টে তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়। আগামী ১৮ জুন তাঁদের সাজা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভুক্তভোগী মেয়ে ও অভিযুক্ত বাবা-মার নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

তিন সপ্তাহ ধরে এই মামলার শুনানি চলে। মামলার শুনানিতে বলা হয়, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ছুটি কাটানোর কথা বলে মেয়েকে বাংলাদেশে নিয়ে যান অভিযুক্ত বাবা-মা। ওই সময় মেয়েটির স্কুল খোলা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পারিবারিক ছুটি কাটানোর নাম করে বাংলাদেশে নেওয়া হয়। বাংলাদেশে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর মেয়েটির বাবা জানায় যে, তাঁর জন্য পাত্র ঠিক করা হয়েছে এবং বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাত্র তাঁর আপন চাচাতো ভাই। মেয়েটি বিয়ে করতে রাজি হননি। বাবা-মা মিলে মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। মেয়ের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা হুমকি-ধমকি দেওয়ার পাশাপাশি মারধরও করেন। তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে মেয়েটি যুক্তরাজ্যে থাকা তাঁর ছেলেবন্ধুর মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ওই ছেলে বন্ধু ইয়র্কশায়ার পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। ফলে বাংলাদেশ থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।

জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি হুমকি এবং শারীরিক নির্যাতনের জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে বাবা-মাকে। বিচারক ফিলিপস অভিযুক্ত বাবা-মাকে রায় শোনার দিনই কারাগারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

২০১৪ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে জোরপূর্বক বিয়েকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছরের কারাদণ্ড।

গত সপ্তাহে জোরপূর্বক বিয়ে সংক্রান্ত প্রথম কোনো মামলায় আদালতের রায় আসে। ওই রায়ে পাকিস্তানি এক মাকে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই মা তাঁর ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে মেয়ের দ্বিগুণ বয়সী একজনের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন।

গত ১৬ মার্চ প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের ফোর্স ম্যারেজ ইউনিট (জোরপূর্বক বিবাহ সংক্রান্ত দপ্তর) ১ হাজার ১৯৬টি ভুক্তভোগীকে পরামর্শ কিংবা সহায়তা দিয়েছে। ৬৫টি দেশের সঙ্গে এসব ঘটনা যুক্ত। এর মধ্যে ৪৩৯টি ঘটনা নিয়ে শীর্ষে আছে পাকিস্তানিরা। আর ১২৯টি ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশিরা।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে ২০১৬ সালের তুলনায় জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা কমেছে ১৯ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা বেড়েছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্ত জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা ছিল ১২১টি।

২০১৭ সালে বাংলাদেশিদের জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনাগুলোর ভুক্তভোগীদের ৯২জন ছিলেন নারী। আর ৩৭ জন ছিলেন পুরুষ। এসব ভুক্তভোগীর সবাই ২১ বছরের কম বয়সী। অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগীর বয়স ১৫ বছরের কম।