বেসিক কেলেঙ্কারি : ৩ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি

আদেশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে দুদক: হাইকোর্ট

উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখছেন না হাইকোর্ট। ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা ও বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে ইতিপূর্বে দেওয়া আদেশ ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেছেন, বাধ্য হয়ে বলছি যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হলেও দেশের উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একদম ব্যর্থ হয়েছে; যা আদালতের আদেশগুলো অর্থহীন করা ও অবজ্ঞার শামিল।

বেসিক কেলেঙ্কারি ঘটনায় করা এক মামলায় ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ফজলুস সোবহানকে জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে এমন অভিমত এসেছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া ফজলুস সোবহান বিদেশ যেতে পারবেন না উল্লেখ করে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ মে ওই রায় দেন। এরপর সাত পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সোমবার (১১ জুন) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্টের এই বেঞ্চের ইতিপূর্বে দেওয়া তিনটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। রায়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বনাম মো. শাহজাহান আলী এবং অন্যান্য’ শিরোনামের মামলায় দেওয়া পর্যবেক্ষণের ভাষ্য, মামলার (বেসিক কেলেঙ্কারি) এজাহার পর্যালোচনায় মনে হয়, জনগণের বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অন্য আসামিদের সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক উপাদান রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ঋণ বাছাই কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ঋণগ্রহীতাদের ওই সব বিতর্কিত ঋণ অনুমোদন দেওয়ায় তাঁদের আইনের আওতায় আনতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। আদেশের কপি গ্রহণের ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

বেসিক কেলেঙ্কারি ঘটনায় করা কয়েকটি মামলায় আসামি হলেন ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ। ‘শিপার আহমেদ বনাম রাষ্ট্র এবং অন্যান্য’ শিরোনামে এক মামলায় ইতিপূর্বে দেওয়া পর্যবেক্ষণও রায়ে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এর ভাষ্য, পক্ষপাতহীন ভূমিকার পাশাপাশি সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রকৃত অপরাধী যারা এই লাভজনক ব্যাংককে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হলো। ‘মো. সেলিম বনাম দুর্নীতি দমন কমিশন’ শিরোনামের অপর এক মামলার পর্যবেক্ষণের ভাষ্য, ‘বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির মামলা পরিচালনায় দুদকের আচরণে প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।’

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ১২০ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় বেসিক ব্যাংকের ২৭ কর্মকর্তা, ১১ জরিপকারী ও গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের ৮২ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। গত বছর আরও পাঁচটি মামলা করে সংস্থাটি।

এসব মামলায় বেসিক ব্যাংকের ২৭ জন কর্মকর্তাসহ ঋণগ্রহীতাদের আসামি করা হলেও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞ এবং সর্বশেষ আদালত পর্যন্ত সমালোচনা করেন।

আদালতের নির্দেশনার পর আবদুল হাই বাচ্চুর বক্তব্য জানতে দুদক তাঁকে নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।