রোহিঙ্গা নিধনে অভিযুক্ত জেনারেলকে বরখাস্ত করল মিয়ানমার

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কানাডা রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনে জড়িত অভিযোগে সাত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিনেই এক জেনারেলকে বরখাস্ত করেছে মিয়ানমার। রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী সামরিক অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জেনারেল মং মং সোয়েকে সোমবার বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে দেশটির সেনা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাংয়ের ফেসবুক পোস্টে বরখাস্তের কারণ হিসেবে রোহিঙ্গা নিধনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। জেনারেলকে বরখাস্ত করার খবর জানিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, অপ্রত্যাশিত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান ফেসবুকে জানিয়েছেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইনে পুলিশের চেকপোস্টে সশস্ত্র হামলা মোকাবিলায় ‘দুর্বলতার’ কারণে মং মং সোয়েকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর গত বছরের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তল্লাশি চৌকিতে হামলার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করে সরকার। হামলার জবাবে চালানো সেনা অভিযানে খুন, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। নৃশংস এই অভিযানে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হতে থাকলেও তাতে অসম্মতি জানিয়ে আসছিল মিয়ানমার।

সোমবার ইইউ ও কানাডা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় বরখাস্ত হওয়া জেনারেল মং মং সোয়েও রয়েছেন। তিনি ছাড়াও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন অপর পাঁচ সেনা কর্মকর্তা, এক পুলিশ কমান্ডার ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক জেনারেল। তাদের বিরুদ্ধে ইউভুক্ত দেশ ও কানাডা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং সেখানে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া জেনারেল মং মং সোয়ের বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে আলাদা ঘটনায় নিধেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল কানাডা। গত ডিসেম্বরে এই জেনারেলকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার কমান্ডার ইন চিফের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে, ইইউ ও কানাডার নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া আরেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অং কিয়াও জাউকে গত ২২ মে স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। গত বছরের শেষ পর্যন্ত অং কিয়াও জাউ ব্যুরো অফ স্পেশাল অপারেশন-৩ এর কমান্ডার ছিলেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা তদারককারী সেনাবাহিনীর এই অংশই রাখাইনে অভিযান চালায়। আর বরখাস্ত হওয়া মং মং সোয়ে গত নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের নেতৃত্ব দেন।

এই দুই সেনা কর্মকর্তা রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘সহিংসতা আর ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনায় দায়ী বলে জানিয়েছে ইইউ। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে বেআইনি হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও রোহিঙ্গা বসতিতে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ। আর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বিবৃতিতে বলেছেন, কানাডা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চুপ থাকতে পারে না। এটা জাতিগত নিধন। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। বাংলাট্রিবিউন