‘রাষ্ট্র বনাম জাকারিয়া পিন্টু ও অন্যান্য’ মামলা: আগাম জামিনে আত্মসমর্পণ প্রসঙ্গ
উচ্চ আদালত

বিচারক সংকটে আপিল বিভাগ, বাড়ছে মামলাজট

বিগত ২৩ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে কম বিচারপতি রয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে বেড়েই চলেছে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা। মামলার জট বৃদ্ধি পাওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগও বাড়ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত প্রায় তিন বছর ধরে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। অন্তত পাঁচজন বিচারপতির পদ শূন্য থাকলেও নতুন কোনো বিচারপতি নিয়োগ পাচ্ছেন না। পদত্যাগ ও অবসরে যাওয়ার ফলে বিচারপতির সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাড়ছে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা। আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।

জানা গেছে, আপিল বিভাগে বর্তমানে চারজন বিচারপতি রয়েছেন। আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। তারা একটি বেঞ্চে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করেন। এই একটি বেঞ্চের কাঁধেই ঝুলছে প্রায় ১৭ হাজার মামলা। এর আগে গত বছরের শুরুতে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ছিল নয়জন। তখন দুটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলত। বিপরীতে মামলার সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৩৬১টি।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় নয়জনে। এর পর আর বিচারপতি নিয়োগ হয়নি। এর আগেই ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দেন। গত নভেম্বরে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চে বিচারকার্যক্রম চলে। তবে সময়ের ব্যবধানে বিচারপতির সংখ্যা কমতে থাকে। ওই সংখ্যা কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে চারজনে। আপিল বিভাগে এত কম সংখ্যক বিচারপতি ১৯৯৫ সালের পর কখনো দেখা যায়নি। আর বিচারপতির স্বল্পতার কারণে বর্তমানে আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে বিচারকার্যক্রম চলছে।

সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন তিনজন। ১৯৭৩ সালে বিচারপতির সংখ্যা ছিল চারজন। এর পর পাঁচজনে উন্নীত হলেও ১৯৭৮ সালে আবার বিচারপতির সংখ্যা চারজনে নেমে আসে। সর্বশেষ আবার বিচারপতির সংখ্যা চারজন ছিল ১৯৯৫ সালে। আর ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকালে আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন ১১ জন।

সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করবেন, সেরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৩ সালে আপিল বিভাগে ৩ হাজার ২৪টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর পর প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায় মামলার জট। ২০১০ সালে এ বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৯ হাজার ১৪১টিতে পৌঁছায়। আর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৬ সালে এটি পৌঁছায় ১৩ হাজার ৬শ ৭২টিতে। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৫শ ৬৫টিতে।

আপিল বিভাগে কবে নাগাদ বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে, তা কেউ নিশ্চিত না করলেও খুব শিগগিরই বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। গত মাসে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আপিল বিভাগে বিচারক সংকট আছে বলে আমি মনে করি না। তবে শিগগিরই বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, আপিল বিভাগে এর আগে সাতজন বিচারক ছিলেন, বহু বছর পাঁচজন বিচারক দিয়ে আপিল বিভাগ চলেছে। আপনারা বলতে পারেন, তার থেকে এখন মামলা বেড়েছে। কথাটা ঠিক। বিজ্ঞ বিচারপতি যারা আছেন, তারা বহুদিন ধরে বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মামলার সংখ্যা কিন্তু কমে আসছে। সে ক্ষেত্রে একেবারে সংকট আছে, সেটায় আমি দ্বিমত পোষণ করি। তারপরও আমার মনে হয়, আপিল বিভাগে খুব শিগগিরই বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।