কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক ডিজি ও পরিচালকের নামে মামলা
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দিতে হচ্ছে দুদক কর্মকর্তাদের

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও নতুন পদ্ধতিতেই পদোন্নতি দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, জ্যেষ্ঠতার মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ইতিমধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তারিখ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানায়, এবারই প্রথম পদোন্নতির জন্য পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করেছে দুদক। কাল শুক্রবার সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রথম দফায় পরীক্ষা হবে।

সম্প্রতি জারি করা দুদকের পরীক্ষাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক ও উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনকারী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার লক্ষ্যে শুক্রবারের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

এর আগে এ বছরের ১৮ এপ্রিল দুদক সচিব মো. শামসুল আরেফিনের সই করা এক অফিস আদেশে দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০০৮–এর বিধি ৬ (৩) অনুযায়ী পরীক্ষাপদ্ধতি ও সিলেবাসের বিষয়ে বলা হয়েছে। যদিও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এর পাশাপাশি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ও জ্যেষ্ঠতার বিষয়টিও আমলে নেওয়া হবে, যা অনুকরণীয় উদ্যোগ বলে মনে করছে কমিশন।

দুদক সূত্র জানায়, অফিস আদেশে পরিচালক, উপপরিচালক ও সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট, সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক, কোর্ট পরিদর্শক, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, কোর্ট সহকারীসহ ১৭ পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবণ্টনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

সিলেবাসে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪; দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন; সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২; দণ্ডবিধি, ১৮৬০ সহ বিভিন্ন আইন ও বিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আদেশে পদোন্নতির ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৪০, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে ৩০ এবং জ্যেষ্ঠতায় ৩০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তিনবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েও উত্তীর্ণ হতে না পারলে তিনি আর পরীক্ষার জন্য যোগ্য হবেন না।

দুদকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতির এ পরীক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দুদকের অফিস আদেশ সংস্থার চাকরি বিধিমালায় জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির বিধিসহ অন্যান্য বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁদের মতে, চাকরি বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবার নতুন মেধাতালিকার ভিত্তিতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ন করে পুরো পদোন্নতি প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে পারে। তা ছাড়া পদোন্নতির জন্য এ রকম পরীক্ষা নেওয়া এবং জ্যেষ্ঠতার বাইরে পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পদোন্নতি দেওয়ার নজির দেশের অন্য কোনো সার্ভিসে নেই বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।

দুদকের চাকরি বিধিমালার ৬–এর উপধারা-৩ অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তির চাকরির বৃত্তান্ত (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বা বিশেষ মূল্যায়ন প্রতিবেদন) সন্তোষজনক না হয়, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সময়-সময় আয়োজিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হন এবং চাকরিতে স্থায়ী না হন, তাহলে তিনি কোনো পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

যাঁরা পরীক্ষাপদ্ধতির বিপক্ষে, তাঁরা বলছেন, বিধিতে কোথাও স্পষ্ট করে ‘পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা’র কথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং সেখানে পদোন্নতি না পাওয়ার অযোগ‌্যতার কথা বলা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, তাঁরা সবাই বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও চাকরির শুরুতেই স্থায়ী হয়েছেন। এ অবস্থায় চাকরির বৃত্তান্ত সন্তোষজনক না হওয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। তা ছাড়া দুদকের সব স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির বৃত্তান্ত একসঙ্গে অসন্তোষজনক হওয়াটাও অযৌক্তিক।

তাঁদের দাবি, চাকরি বিধিমালায় ‘সময়-সময় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া’ বলতে কমিশন বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যেসব প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকে, সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। ওই বিধিমালার ৬ বিধির কোথাও পদোন্নতির পূর্বশর্ত হিসেবে বাধ্যতামূলক কোনো পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। সময়-সময় আয়োজিত পরীক্ষার বিষয়টিকে ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে যে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে, তা বিধির অন্যান্য বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটি চাকরি বিধিমালা, ২০০৮–এ পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়ার বিধান নেই মর্মে মতামত দিয়েছিল। তাই জারি করা অফিস আদেশ যথাযথ নয় এবং সেটা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা ও বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।

এর ভিন্নমতও রয়েছে। যাঁরা পরীক্ষাপদ্ধতির পক্ষে, তাঁরা বলছেন, এর মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিরাই পদোন্নতি পাবেন। দুদকের মতো একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের কাজ, আইন-বিধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় এসব জ্ঞানেরই মূল্যায়ন করা হবে।

সম্প্রতি দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি পদোন্নতি নিয়ে যখন নানা বিতর্ক চলছে, ঠিক তখনই দুর্নীতি দমন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, জ্যেষ্ঠতা, সততা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে আংশিক পরীক্ষা প্রথা প্রবর্তন করেছে। আগের কমিশন ২০১৫ সালে পরিচালক, উপপরিচালক এবং সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়। ওই পদোন্নতি নিয়ে তখন গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। এ বাস্তবতায় বর্তমান কমিশন পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সর্বজনীন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। দীর্ঘ আলোচনা শেষে চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করে পদোন্নতির লক্ষ্যে পরীক্ষার সিলেবাস, মানবণ্টন ও পরীক্ষাপদ্ধতি অনুমোদন–সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়।

পরীক্ষার বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁর মতে, সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি সৎ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া উচিত।