বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

চক্ষু শিবিরে চোখ হারানোর দায় এড়াতে পারেন না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়: হাইকোর্ট

চুয়াডাঙ্গার চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে আসা ২০ জনের চোখ হারানোর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে আসা চোখ হারানো ২০ জনের ক্ষতিপূরণের রুল শুনানিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আজ সোমবার (১৬ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেছেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত, সুভাষ চন্দ্র দাস ও মো. শাহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।

শুনানির শুরুতে অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের পক্ষে দু’টি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে দু’টি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হলেও রিপোর্ট দু’টিতে দুই রকম মত দেওয়া হয়েছে।

তাই রিপোর্ট দু’টি প্রসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তের মত জানতে চেয়ে আদালত বলেন, ‘প্রতিবেদন বিষয়ে আপনার কোনও বক্তব্য আছে কিনা?’ জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘দু’টি প্রতিবেদনেই দুই রকমের মত দেওয়া হয়েছে।’

এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ওই ওষুধগুলো দেশে আনা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো রেজিস্টার্ড ছিল না।’

এ সময় আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, ‘তাহলে ড্রাগ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া কিভাবে ওষুধ আনলেন? আপনারা জানেন না, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে? তার মানে আপনাদের নলেজে ছিল। ওষুধ বা অপারেশন যন্ত্রপাতিতে যদি সমস্যা থাকে, তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমতি ছাড়া সেগুলো দেশে আসে কিভাবে? এটা মানা যায় না। এটা বলে আপনারা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) দায় এড়াতে পারেন না।’

জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘এই রিটটি চলমানযোগ্য নয়। স্বাস্থ্য সেবার অধিকার, মৌলিক অধিকার নয়।’

তখন আদালত জানতে চান, এই রিটটি জনস্বার্থে করা হয়েছে কিনা? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হ্যাঁ।’

এরপর আদালত বলেন, ‘রিটটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা, সেটি আমরা রুল শুনানিতে দেখবো। সাংবিধানিক বিষয়টি আমরা ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলামের কাছে শুনবো।’

এরপর আদালত এ মামলার কার্যক্রম আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত মুলতবি করেন।

এর আগে গত ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলের জবাব না দেয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন হাইকোর্ট।

গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয়দিন (৫ মার্চ) ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের পক্ষ থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয় যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।

পরে আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কেন চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, চুয়াডাঙ্গার ডিসি ও এসপি, ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ডা. মোহাম্মদ শাহীনসহ মোট ১০ জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালত পৃথক এক রুলে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরে চক্ষু চিকিৎসায় ২০ জনের চোখ অস্ত্রোপচারে কার্যকর, যথাযথ ও পর্যাপ্ত নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চান। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত।