চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে ক্রেতা আকৃষ্টের দিন শেষ

খাবার এবং কোমল পানীয়ের গায়ে অতিরঞ্জিত কথা প্রচারণা করার দিন শেষ হয়ে আসছে। বাজারের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এবং পানীয়ের গায়ে এবং বিজ্ঞাপনে প্রচলিত নানারকমের ট্যাগলাইন যেমন পণ্যটি ‘সম্পূর্ণ কেমিক্যালমুক্ত’,‘বাজারের সেরা’,‘আমারটাই সেরা’,‘১৬ কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে’,‘বিশ্বের সেরা ড্রিংকস’,‘একটু বেশি পিওর’,‘খেলে অসম্ভব হবে সম্ভব’, ‘রাতারাতি কমে যাবে বয়স’,‘ভেজাল প্রমাণে লাখ টাকা পুরস্কার’,‘১০০ ভাগ পিওর’,‘ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল’,‘রোগ থেকে দেয় সুরক্ষা’,‘পণ্যটি যেন অমৃত সুধা!’ ইত্যাদি ধরনের কথা আর লেখা যাবে না।

আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর বাজারে এধরনের বিজ্ঞাপন সম্বলিত পণ্য পাওয়া গেলে নিরাপদ খাদ্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কারণ, এধরনের প্রচারণা নিরাপদ খাদ্য আইনের মোড়াকাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা, ২০১৭’র পরিপন্থী।

নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে কোনও ব্যক্তি কোনও খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত বিজ্ঞাপনের শর্তাদি লঙ্ঘন করে বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্তিকর বা অসত্য তথ্য প্রদান করে অথবা মিথ্যা নির্ভরতামূলক বক্তব্য প্রদান করে ক্রেতার ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ বা প্রচারের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি কোনও খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণের গুণ, প্রকৃতি, মান, ইত্যাদি সম্পর্কে অসত্য বর্ণনাসম্বলিত কোনও বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ, প্রকাশ বা প্রচার করতে পারবেন না যার দ্বারা জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে।

দেশে এ বিষয়ে আইন থাকলেও আইনটির প্রয়োগ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করেই ক্রেতা আকৃষ্টে সোচ্চার ছিল বড় ছোট সব ধরনের কোম্পানি। কিন্তু, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মনে করে কেউ নিজেকে কখনও সেরা দাবি করতে পারে না। তাই খাদ্য এবং খাদ্যপণ্যের লেবেলে ও বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য এবং যুগ্মসচিব মাহবুব কবির মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন তথ্য, ক্রেতা প্রতারিত হতে পারে এমন তথ্য বা ছবি অথবা দাবি করা যাবে না। কোনও প্রকার অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়া যাবে না। অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যেই তাদের খাদ্যপণ্যের লেবেলের ভাষা এবং বিজ্ঞাপন পরিবর্তনের কাজ হাতে নিয়েছেন। সবাই লাইনে চলে আসবে। না আসলে আগামী ৩১ জুলাই এর পর হতে শুরু হবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ। কেউ বাদ যাবে না। অন্য দেশে চললেও আমরা চলবো আমাদের আইন অনুযায়ী।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে অনেক কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবারও খাদ্য ও কোমল পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কোনও কোনও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত মোড়কাবদ্ধ খাদ্য বা খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত সব উপকরণের তালিকা বা বিবরণ লেভেলে উল্লেখ করছে না। আবার কারও কারও উৎপাদিত মোড়কাবদ্ধ এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বা খাদ্যপণ্যে এলার্জি সৃষ্টিকারী বা অসহিষ্ণু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী উপকরণ থাকলেও লেভেলে তার কোনও ঘোষণা থাকছে না, যা এই প্রবিধানমালার পরিপন্থী। এতে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এর আওতায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

অন্যদিকে, কোনও নির্দিষ্টের ব্র্যান্ডের জন্য এসব চটকদার বিজ্ঞাপন নিয়ে মূলত কাজ করেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও এজেন্সি। বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই আইন বাস্তবায়িত হলে তাদেরকে এই ভাষা থেকে সরে এসে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। তবে কেউ কেউ বলছেন, আইন বাস্তবায়নের আগে তাদের সঙ্গে কথা বলে নিলে বিষয়টি আরেকটু যুক্তিসঙ্গত করা যেত।

বিজ্ঞাপন সংস্থা গ্রে ঢাকার গ্রুপ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নুরুর রহমান বলেন,‘যত রেস্ট্রেকশন আসবে তত ক্রিয়েটিভ হতে হবে আমাদের। তার ভেতরেই কাজ করতে হবে আমাদের, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি আদেশ হলে মানতে হবে,কিছু করার নেই।’