পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ মর্যাদার সব কোর্টে আপিল করা যাবে
আদালত (প্রতীকী ছবি)

বিচারক শূন্য পারিবারিক আদালতে ঝুলে আছে হাজারো মামলা

আকলিমা আক্তার সোনিয়া (২৮)। ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে মোহাম্মদ শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পরে আকলিমার কোলজুড়ে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। কিছু দিন সংসার ভালোভাবে চললেও হঠাৎ করে স্বামী শিমুল স্ত্রী আকলিমাকে তালাক দেন এবং মেয়ের ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে আকলিমা জাতীয় আইনগত সহায়তার মাধ্যমে ঢাকার ১৩তম পারিবারিক আদালতে দেনমোহর ও খোরপোষের মামলা করেন।

সে মামলায় আদালত থেকে স্বামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও দীর্ঘদিন ওই আদালতের বিচারক না থাকায় মামলার বিচারকাজ এগোচ্ছে না। আকলিমা প্রতি তারিখে আদালতে গেলেও বিচারক না থাকায় আকলিমার মামলার কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না।

আকলিমার মতো হাজারো মামলা ঢাকার ১৩তম পারিবারিক আদালতে ঝুলে আছে।

পারিবারিক আদালতের রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, ঢাকার ১৩তম পারিবারিক আদালতে পাঁচ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে। এসব আদালতে দেন মোহরানা, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দাম্পত্য পুনরুদ্ধার, তালাক, ডিক্রি জারিসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। আর এসব মামলার বাদী বেশিরভাগই হচ্ছেন হত-দরিদ্র নারী।

ঢাকার পারিবারিক আদালতের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, পারিবারিক আদালতে নারীরা তাদের অধিকার পেতে মামলা করেন। অনেক নারীর স্বামীরা স্ত্রীকে তালাক দেয়, শিশু থাকলে তাদের ভরণপোষণ দেয় না। সে ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতে মামলা করে ভরণপোষণ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এমন আদালতে দীর্ঘদিন ধরে বিচারক না থাকায় হতদরিদ্র নারীরা আদালতবিমুখ হবেন। এ ছাড়া তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।

বিবাদীদের কৌশল
পারিবারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও বিবাদীর আইনজীবীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করেন। অনেক ক্ষেত্রে মামলার বিচার শেষ হতে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়।

আদালতে বাদী ৫০ হাজার বা এক লাখ টাকার দেনমোহর পেতে মামলা করেন তাঁরা দীর্ঘদিন আদালতে আসতে আসতে হয়রানির শিকার হয়ে আর মামলা চালাতে চান না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী রবিউল ইসলাম বলেন, পারিবারিক মামলায় অল্প পরিমাণের দেনমোহরের মামলাগুলোতে বিচারক দ্রুত রায়ের পদক্ষেপ নিলে বিচারপ্রার্থীরা অনেক উপকৃত হবেন। এ সব মামলা বছরের পর বছর চালাতে বাদীদের আদালতে আসা-যাওয়া ও আদালতের খরচ মেটাতে হিমসিম খেতে হয়। অনেক সময় বাদীরা আদালতে হতাশা হয়ে মামলা চালাতে চান না।

এ বিষয়ে ঢাকার ১৩তম পারিবারিক আদালতের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এ আদালতের বিচারককে ঢাকার ১৫তম পারিবারিক আদালতে বদলি করার আদালতে অনেক মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। আর বাদী বা সাক্ষীরা এসে ঘুরে যাচ্ছেন। তবে খবু গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় থাকলে ১২তম পারিবারিক আদালতে মামলার বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। তাও সে আদালতের বিচারকের সব কাজ শেষ করার পর ১৩তম পারবিারিক আদালতের মামলার বিচারকাজ ধরেন। এনটিভি