ডিজিটাল আইনের গণবিরোধী ধারা বাতিলে সুপ্রিম কোর্টে মানববন্ধন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সরকার দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, আমলা ও নেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন। এমন আইন একটি গণতান্ত্রিক দেশে থাকতে পারে না।

আজ সোমবার (১ অক্টোবর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে এসব কথা বলেন আইনজীবীরা। ডিজিটাল আইনের গণবিরোধী ধারা বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট এ তাহের, আনোয়ার হোসেন রেজা, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আরিফুল হক রোকন, সমিতা বাগচী, লালন, রেজা ইসলাম রিয়াজ, মো. হাফিজুল সলাম পাটোয়ারি, একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ আইনজীবী বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি সরকারই মুক্তিযুদ্ধের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দেশকে পরিচালনা করেছে। বর্তমান সরকারও এর অন্তর্ভুক্ত। এমনকি এই ডিজিটাল আইনও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে আইনজীবীরা বলেন, ‘এই নতুন আইনে শাস্তির পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এমনকি ৫৭ ধারার চেয়েও। একই ধরনের আইনে অন্যান্য দেশে যে সাজা দেয়া হয়, তার সঙ্গে তুলনা করলেও দেখা যাবে এই সাজার পরিমাণ বহুগুণ বেশি। ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতিসহ মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধের চাইতেও তা বেশি। প্রায় খুনের সাজার কাছাকাছি এই আইনের অধীনে সাজার পরিমাণ। কেবল মৃত্যুদণ্ডটাই বাদ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কথা বলার সাজা কাউকে মারাত্মক আহত করার চাইতে বেশি। দুর্নীতি ফাঁস করার সাজা দুর্নীতি করার চাইতে বেশি।’

তারা আরও বলেন, ‘এই আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়- এমন গবেষণাও অপরাধের আওতাভুক্ত। সেগুলো জামিন-অযোগ্য অপরাধের তালিকাভুক্ত হয়েছে, যা আরও বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ।’

আইনজীবীদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে পুলিশকে যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। এই আইন পাস করার ফলে দেশের সাংবাদিকতা মুখ থুবড়ে পড়বে। আইনটিতে অনুমোদন না দিতে তারা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আইনজীবীদের ভাষ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হলে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে এবং ক্ষমতাসীনদের ভাষ্যের বাইরে অন্য কিছু প্রকাশ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সাংবাদিকরাতো বটেই, নাগরিকরাও সেলফ সেন্সরশিপ চর্চা করতে বাধ্য হবেন। এমনটি হলে বাক-স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়ে দেশব্যাপী একটা গুমোট আবহাওয়া তৈরি হবে।’