বাংলাদেশের উচ্চ আদালত

দেশের পেশাজীবীরা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ সকল পেশাজীবী প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত। কেউ আওয়ামী লীগের সমর্থক আবার কেউ বিএনপির সমর্থক।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে করা আবেদনের শুনানিতে আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন আদালত। পরে চিকিৎসার বিষয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালত চিকিৎসার বিষয়ে মূল নির্দেশনা দেয়ার আগে আদেশে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এটা সত্য যে বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইউনাইটেড বা অ্যাপোলোর মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তিনি পছন্দমতো চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে চান। তার পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসার সুবিধা দেয়া বিবেচনার দাবি রাখে। তবে, বাস্তবতা হলো তিনি যেহেতু সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি। তাই আইনগতভাবে তাকে সরকার বা কারা কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানেই চিকিৎসা নিতে হবে।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, সরকার তার চিকিৎসার জন্য বিএসএমইউ হাসপাতালের ৫ জন চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। এই মেডিকেল বোর্ডের তিনজন সদস্যের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছেন যে তারা স্বাচিবের (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) নেতা। তাদের (চিকিৎসকদের) মাধ্যমে খালেদা জিয়া সঠিক চিকিৎসা পাবেন না বলে তাদের (বিএনপির) সন্দেহ। তবে, আমরা বিশ্বাস করি যে একজন চিকিৎসক তিনি যে দলেরই সমর্থক হন না কেন, যখন তিনি চিকিৎসা দেন তখন তার দলীয় চিন্তা থাকে না। একজন রোগীকে রোগী হিসেবেই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

তখন আদালত বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ সকল পেশাজীবী আজ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে বিভক্ত। কেউ আওয়ামী লীগ সমর্থক আবার কেউ বিএনপি সমর্থক। কিন্তু, আমরা বিশ্বাস করি যে, পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে বা পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা এসব রাজনৈতিক বিভক্তির ঊর্ধ্বে থাকেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পেশার নীতিই অনুসরণ করেন।

এর আগে খালেদা জিয়াকে অনতিবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করার নির্দেশ দেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।

তার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেছা আহমেদকে রেখে নতুন করে ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে বলা হয়েছে।

অন্য যে তিনজনকে রাখতে বলা হয়েছে তাদের কেউ যেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) ও ডক্টর অ্যাসোসিয়শন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কোনো কমিটির সদস্য না হন। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে এই বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বাইরের পছন্দমতো যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। একইসঙ্গে এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া তার পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট ও মেডিকেল ট্যাকনিশিয়ান নিতে পারবেন।

এই আদেশ দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার, কারা কর্তৃপক্ষ ও বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার মর্যাদার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। ইউনাইটেড বা অ্যাপোলো’র মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশান চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই আদেশ দেন আদালত।