‘গায়েবি’ মামলা করায় পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট

দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় চার হাজার মামলায় মৃত ব্যক্তি কিংবা সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের আসামি করায় পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, ‘এ ধরনের মামলায় (গায়েবি) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের (সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে এমন (গায়েবি) মামলা হলে জনগণের কাছে কি মেসেজ যাবে?

আজ সোমবার (৮ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত রিটের শুনানিকালে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ প্রশ্ন তোলেন।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

শুনানির শুরুতে কয়েকটি মামলার এজাহার পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট বলেন, এ ধরনের মামলায় (গায়েবি) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো লোকদের বিরুদ্ধে এমন মামলা হলে জনগণের কাছে কি মেসেজ যাবে?

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল আদালতকে বলেন, উনি (খন্দকার মাহবুব হোসেন) তো শুধু আইনজীবীই নন, একটি রাজনৈতিক দলের পদধারী।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এটা কি বললেন? তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এটা তো আইনে নেই। আগে আইনজীবীরাই বেশি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।’

এরপর এ মামলায় ড. কামাল হোসেন শুনানি করেন। শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চাইলে আদালত আগামীকাল পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি করেন এবং অ্যাটর্নির শুনানি শেষে আদেশ দেবেন বলে জানিয়ে দেন।

পরে রিটের আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী মো. মাসুদ রানা জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার হাজার মামলা হয়। ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে একই জায়গায় পর পর তিন থেকে চারদিনে ৪-৫টি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এর প্রত্যেকটি মামলায় তিনি ককটেল বিস্ফোরণের আসামি। তার মতো ব্যক্তি সন্ধ্যার পরে গিয়ে ককটেল ছুড়তে পারেন এটা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য? ২০০৭ সালে মারা গেছেন, কিংবা চলতি বছর হজে ছিলেন, বিদেশে থাকেন- এমন লোকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

এর আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট এ কে খান। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়ার পক্ষে এই রিট দায়ের করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করা হয়। রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত গায়েবি মামলা করা হয়েছে সেগুলোর তদন্ত বন্ধ এবং এ গায়েবি মামলাগুলোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কমিটি করে ঘটনার তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যেন এ ধরনের মামলা দেওয়া না হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি ক্ষমতা অপব্যবহার করে গায়েবি বা মিথ্যা মামলা দায়ের করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রিটে সে বিষয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট নয়জনকে এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে।