সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ১৭ বাংলাদেশি

সৌদি আরবের বিশা কেন্দ্রীয় কারাগার। ২০০৭ সাল থেকে সেখানে আটক রয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈর থানার সোয়েব ব্যাপারী। বাংলাদেশিকর্মী আবুল বাশার ও মোশাররফ হোসেনকে হত্যার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

২০০৯ সালে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দেশটির শরিয়া আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। তবে ওই সময় নিহত মোশাররফের সন্তানের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। ফলে ব্লাডমানির (রক্তের বিনিময়ে টাকা) মাধ্যমে সমঝোতার বিষয়টি তোলা যায়নি।

সৌদি আইনানুযায়ী, ১৫ বছর বয়সীকে প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেচনা করা হয়। সে হিসাবে নিহতের সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হবে ২০২১ সালে। আর তখন সমঝোতা না হলে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করবে সৌদি সরকার।

কেবল সোয়েব নন, দেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে অন্তত ১৭ বাংলাদেশি মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। নানা অপরাধের কারণেই দেশটির শরিয়া আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন।

এ ছাড়া সৌদির ১৩ কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৬৩০ বাংলাদেশি; আর ডিপোর্টেশন সেন্টারে আটক রয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। এক বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৬ সাল থেকে জেদ্দার ব্রিমান জেলখানায় আটক রয়েছেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার সোহাগ। তাকেও মৃত্যুদ- দিয়েছেন দেশটির শরিয়া আদালত। তবে সরকারি নথিপত্র বলছে- সোহাগের প্রকৃত নাম চান্দি মিয়া। এ বছরের ২৫ এপ্রিল সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নোট ভারবালের মাধ্যমে অভিযুক্তের প্রকৃত নাম অন্তর্ভুক্তিসহ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার দ্রুত তা সংশোধন না করলে সোহাগ নামেই আদালতের রায় কার্যকর করা হবে বলে দূতাবাস সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার আলম মিয়া। ২০১১ সাল থেকে তিনি সৌদি আরবের আল-বাহা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক। অভিযোগ, সৌদি নাগরিক আব্দুল আজিজ বিন আলী বিন ইয়াহিয়াকে হত্যা। একই উপজেলার শাহজালাল আটক রয়েছেন এক ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যার অপরাধে। বাগেরহাটের কালাম দুই ইন্দোনেশিয়ান নারী ও এক বাংলাদেশি হত্যার অভিযোগে ব্রিমান কারাগারে আটক। এ ছাড়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দেলোয়ার হোসেনসহ আরও ১৪ বাংলাদেশি বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুপরোয়ানা নিয়ে কারাগারে দিন পার করছেন।

শুধু মৃত্যুদণ্ডই নয়, বিভিন্ন অপরাধে ৬৩০ বাংলাদেশি আটক রয়েছেন সৌদি আরবের ১৩ কারাগারে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় বছরের পর বছর কারাগারে আটক থাকতে হচ্ছে এ শ্রমিকদের। তাদের মুক্তি নিয়েও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বন্দিদের দেশে ফেরানোর সব চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দূতাবাসসহ একাধিক সূত্রের দাবি, সৌদির মালাজ কারাগারে ৯৭, আল হায়ের কারাগারে ১৮৭, দাম্মাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫৬, আল হাসা কারাগারে ৩১, আল খোবার কারাগারে ৩৩, আল জোবাইল কারাগারে ৪৯, কাতিফ কারাগারে ১২, হাফার আল বাতেন কারাগারে ১৯, হাইল কারাগারে ১৮, বুরাইদাহ কারাগারে ১৮, কুরাইয়াত কারাগারে ১, আরার কারাগারে ৩, সাকাকা কারাগারে ৬ বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। তারা সবাই সুনির্দিষ্ট অপরাধের ভিত্তিতে আটক বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। কারাগার ছাড়াও সৌদি আরবের ডিপোর্টেশন সেন্টারে অনেক বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। শ্রম আইন ভাঙার অপরাধে তাদের আটক করা হয়। সাধারণ ক্ষমার সুযোগে দেশে না ফেরায় তাদের অনেককে আবার জেলেও যেতে হয়েছে।

দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রিয়াদ ডিপোর্টেশন সেন্টারে বর্তমানে ৭৩৯ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে ৬৮৩ জনকে আউটপাস ইস্যু করা হয়েছে। আর দাম্মাম ডিপোর্টেশন সেন্টারে রয়েছেন ৪০৫ জন।

প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক জাহিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রবাসী, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লেবার কাউন্সিলরদের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সৌদিতে আটকদের দেশে ফেরাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।’