অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদিন

রায় খতিয়ে দেখবো: মাহবুবে আলম, আপিলে খালাস পাবো: জয়নুল আবেদীন

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘এখানে ফাঁসি যাদের হয়েছে, তাতে আমরা স্বস্তি অনুভব করছি। তবে আরও কারো কারো ফাঁসি দেওয়া উচিৎ ছিল কি-না সেটা আমি খতিয়ে দেখবো’।

অপরদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন আশা প্রকাশ করেছেন, আপিল করার পর দণ্ডিতরা খালাস পাবেন।

রায়ের পর উচ্চ আদালতে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে জয়নুল আবেদীন এসব মন্তব্য করেন।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচারের ইতিহাসে আজকে একটি মাইলফলক সূচিত হলো। যে মামলাটিকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। জজমিয়া নামক এক নিরপরাধ লোককে সাজানো হয়েছিল আসামি। সে পর্যায় থেকে মামলাটি আলোর মুখ দেখেছে এবং অপরাধীরা সাজা পেয়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি বড় সার্থকতা’।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কোনোভাবেই বলা যাবে না এটা সাধারণ সন্ত্রাসীদের কাজ এটা অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনাকে তার দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল এবং হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছিল।এই মামলাটিতে প্রমাণ হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কতখানি ভয়ঙ্কর হতে পারে! রাজনৈতিকভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন’।

তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের ফাঁসি হয়েছে, তাতে আমরা স্বস্তি অনুভব করছি। তবে আরও কারো কারো ফাঁসি দেওয়া উচিৎ ছিল কিনা সেটা, রায়টা আমি খতিয়ে দেখবো। আগে রায়টা পড়ে দেখবো। যদি রায়ে উল্লেখ থাকে যে, তারেক রহমানকে মাস্টারমাইন্ড তাহলে অবশ্যই তার ফাঁসি দেওয়া উচিৎ ছিল’।

এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে জয়নুল আবেদীন বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুফতি হান্নান ও তারেক রহমানের নাম প্রাথমিকভাবে (সাক্ষ্যে) বলেননি। ৪১০ দিন তাকে (মুফতি হান্নান) রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের আইনে আছে একটি মামলায় ১৫ দিনের বেশি কাউকে রিমান্ডে নেওয়া যাবে না। কিন্তু মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে তারেক রহমানের নাম বলানো হয়েছে। যদিও তারেক রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা এখানে ছিল না।

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, এই মামলায় সাক্ষী ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা)। মুফতি হান্নান ও প্রধানমন্ত্রী সাক্ষীতে তারেকের নাম বললে বুঝতাম তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু একদিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তারেক রহমানের নাম বলেননি (সাক্ষ্যে) অন্যদিকে তিনি সাক্ষ্য দিতে আদালতেও যাননি। তাই এই মামলায় তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার কিছু নেই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মুফতি হান্নানের ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বিএনপির অনেককে সাজা দেওয়া হয়েছে। লুৎফুজ্জামান বাবর, পিন্টুকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সেই ১৬৪ ধারার জবানবন্দি আদালতে না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সাজা হতে পারে না। তাই এই সাজা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদেরকে সাজা দিয়েছে, অথচ মামলায় সাজা দেওয়ার মতো কোনো কিছুই ছিল না। একদিকে তারা আদালতকে ব্যবহার করেছে, অন্যদিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য সারা বাংলাদেশে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।

জয়নুল বলেন, এই মামলায় তারেক রহমানসহ যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে আমরা আশা করি আপিল করে তাদের সবাইকে খালাস করাতে সক্ষম হব।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেয়া হয়েছে। জীবিত ৪৯ আসামির বাকিরা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন।