ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

২১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের নগ্ন উদাহরণ

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ: 

মরণঘাতি রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূল করার জন্য নিষ্ঠুর হামলা, তা যেখানেই ঘটুক না কেন, বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে যেতে দেওয়া যায় না। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আগেও এ ধরণের হামলার শিকার হয়েছে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার ও আত্মীয়দের হত্যা করা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এই হত্যাযজ্ঞের মাত্র ৪১ দিনের মাথায় হত্যাকারীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে অর্ডিন্যান্স পাস করা হয় যেন হত্যাকারীদেরকে কোন আইনী প্রক্রিয়া বা অন্য কোন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা না যায়। যাইহোক, পরে এই অধ্যাদেশটি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয় এবং বিখ্যাত “বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা” দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটায় এবং দেশের আইন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করে।

“একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা” নিয়ে বললে বলতে হবে যে, এটা বাংলাদেশের রাষ্ট্র দ্বারা মদদপুষ্ট রাজনৈতিক সন্ত্রাসের একটি নগ্ন উদাহরণ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সেসময়ের সরকার ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং তার দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ওপর এমন মরণঘাতী হামলার মাধ্যমে আসলেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি অরাজনৈতিক করার ষড়যন্ত্র করেছিলো। এটা খুবই লজ্জার বিষয় যে, এই হামলার পরে তৎকালীন বিএনপি সরকার হামলার প্রমাণ লোপাট এবং হেরফের করার চেষ্টাই করেনি বরং মিথ্যা রাজনৈটিক নাটক সাজানোর মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থাকেও থামিয়ে দিতে চেয়েছিলো। যে কারণে বহুল প্রতীক্ষিত এই মামলার বিচার ন্যায় বিচার নিশ্চিতে এবং রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট রাজনৈতিক সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাছাড়া, শুধু বাংলাদেশে নয়, এই রায়টি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অতিরিক্ত আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করবে যা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক-সন্ত্রাসবাদের অনুরূপ ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। পাকিস্তানে লিয়াকত আলী খান (১৯৫১), মুহম্মদ জিয়াউল হক (১৯৮৮) ও বেনজির ভুট্টো (২০০৭), ভারতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৯৪৮), ইন্দিরা গান্ধী (১৯৮৪) এবং রাজিব গান্ধী (১৯৯১), শ্রীলংকার বন্দরনায়েক (১৯৫৯), ভিজয়া কুমারানাতুঙ্গা (১৯৮৮) এবং রানাসিংহে প্রেমাদাসা (১৯৯১), ভূটানের জিগমে পালডেন দর্জি (১৯৬৪), মালদ্বীপের ড. আফরাসিম আলী (২০১২) রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের অল্প কয়েকটি উদাহরণ মাত্র।

অতএব, এই অঞ্চলে রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসের অবসান এবং বহুবচনবাদী গণতান্ত্রিক সমাজকে রক্ষা করার জন্য অপরাধীদেরকে তাদের সহযোগী ও মিত্রদেরসহ বিচারের মুখোমুখি আনতে হবে।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনের শিক্ষক