অ্যাডভোকেট তানজিম আল ইসলাম

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হলে নিতে পারেন আইনের আশ্রয়

তানজিম আল ইসলাম: প্রত্যেক ব্যক্তিরই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। এই গোপনীয়তা হতে পারে কোনো চিঠিপত্র বা যেকোনো যোগাযোগের ক্ষেত্রে। নিজের যেকোনো তথ্যও ব্যক্তিগত গোপনীয়তারই অংশ। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি একটি সাংবিধানিক অধিকারেরও বিষয়।

কীভাবে লঙ্ঘিত হয়
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা অনেকভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কাছের মানুষ সব গোপন বিষয় ফাঁস করে দেয়। ধরুন কারও কাছে বিশ্বাস করে কিছু তথ্য দিয়েছেন কিংবা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ে জানে। হঠাৎ মনোমালিন্য হলে দেখা যায় গোপন বিষয়গুলো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় কিংবা দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকি নিজেদের ব্যক্তিগত ভিডিও কিংবা ছবিও অনেক সময় ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে একে অপরকে হেয় করার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।

ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে জিম্মি করে মানসিকভাবে নির্যাতনও করার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে নিজের অজান্তে হ্যাকারদের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফেসবুকে এবং অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য আমরা প্রকাশ করে থাকি। এ থেকেও নিজেদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে। আবার নিজেদের ফোন নম্বর, ই-মেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এসবও নানাভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র যদি নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য নিতে পারে যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মধ্যে না-ও পড়তে পারে। সংবাদমাধ্যম যদি কোনো সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির যুক্তিসংগত তথ্য প্রকাশ করে সেটিও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন না-ও হতে পারে।

কীভাবে আইনের আশ্রয়
কোনোভাবে যদি কেউ অন্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এবং মানহানি কিংবা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে তাহলে সেটি অপরাধের পর্যায়ে পড়বে। কারও অজান্তে ব্যক্তিগত তথ্য যদি কেউ কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং এটি যদি মানহানিকর হয় তাহলেও এটি অপরাধ। কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীর অশ্লীল বা বিভ্রান্তিমূলক ছবি প্রকাশ করলেও অপরাধ হবে। এ ধরনের অভিযোগে প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ আছে।

যদি অনলাইন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অপরাধটি হয় তাহলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০১৩)-এর আওতায় থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে মামলা করা যাবে। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর আওতায় মামলা করা যাবে। কোনো ব্যক্তি কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে কোনো প্রলোভনে তাঁর জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে তিনি সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদাহানি করলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোনো সুবিধা আদায় করলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। কোনো ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণ করা কোনো পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এসব আইন ছাড়াও দণ্ডবিধির আওতায় মানহানির মামলা দায়েরের সুযোগ রয়েছে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট