নির্বাচনে অপরাধ দমনে বিচারকদের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ ইসির

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপরাধ দমনে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির (ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি) বিচারকদের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা।

আজ বুধবার (০৫ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে তদন্ত কমিটির বিচারকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সিইসি এ নির্দেশনা দেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিচারকদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যাদের নির্বাচন আচরণবিধি প্রতিপালনসহ অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে হবে। এ জন্য বিচারকদের আরও সক্রিয়ও হতে হবে।

তদন্ত কমিটির বিচারকদের নির্বাচনী মাঠে সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। যেকোনো প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে কেএম নুরুল হুদা বলেন, ‘ইতিমধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গসহ নানা অপরাধের প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ আসা শুরু করেছে কমিশনে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি নিরব রয়েছে।’

এসময় যুগ্ম জজ পর্যায়ের বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় সিইসি তাদের ওপর ক্ষোভও প্রকাশ করেন। পরে সিইসি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, তদন্ত কমিটির বিচারকদের দৃশ্যমান হয়ে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা প্রত্যেকদিন শত শত অভিযোগ পাই। কিন্তু এসব অভিযোগ আমাদের কাছে আসার কথা নয়। কারণ আপনারা সেখানে রয়েছেন। আমরা অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু প্রয়োজন ছিল, অভিযোগগুলো সরাসরি আপনাদের কাছে যাবে, কিন্তু সেটা যায় না।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের ভিজিবল (দৃশ্যমান) হতে হবে। তার মানে এখন পর্যন্ত কিন্তু ভিজিবল হননি, বাস্তবতা হলো এটা। এর কারণ আপনাদের যে এতো বড় দায়িত্ব আছে, সে সম্পর্কে মানুষ ওয়াকিবহাল না। ওকাকিবহাল হবেন তখনই, যখন আপনারা ভাইব্রেন্ট হবেন; ভিজিবল হবেন।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাজের মাধ্যমে পরিচিতি যখন বাড়বে, আপনাদের ওপর মানুষ আস্থা রাখবে, আপনাদের যখন চিনবে, আপনাদের কমিটিকে যখন চিনবে- তখন থেকে আপনাদের ওপর দায়িত্ব আসবে। ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে আর শত শত অভিযোগ আসবে না। ২৫ নভেম্বর ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠনের পর থেকে আশানুরূপ তদন্ত হয়নি।’

সিইসি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটা করে হলেও ১২২টি তদন্ত সম্পন্ন হবে। সে প্রত্যাশা ছিল আমাদের। কিন্তু ১০০টিও না, ২২টিও হয়নি। কেননা, এখন পর্যন্ত আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে গুছিয়ে উঠতে পারেননি।

নুরুল হুদা আরও বলেন, আপনারা আপনাদের করণীয় যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে মানুষের অভিযোগ শুনবেন; আমলে নেবেন। যেনো অভিযোগ ঢাকা পর্যন্ত না আসে, এলাকায় বসে সমাধান পেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য ছিল গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) পরিবর্তন করে আপনাদের মানুষের কাছে একেবারে প্রতিটা মানুষের, প্রতিটা সমস্যার কাছাকাছি থেকে যেনো তারা সমাধান পায়- সেই ব্যবস্থা করা। তারা যেনো তাদের সমস্যা নিয়ে এখানে-ওখানে ছুটাছুটি না করে আপনাদের সামনে পেয়ে আপনাদের কাছে অভিযোগগুলো পেশ করতে পারে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, সে দায়িত্ব পালনে আপনাদের প্রো অ্যাকটিভ হতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে আপনারা আছেন।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে নির্বাচন কমিশনাররা বলেন, এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নিচ্ছে। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রত্যেককে সমান গুরুত্ব দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।