বিচারপতি সিনহা ও নাজমুল হুদা

বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ২৬ ফেব্রুয়ারি

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ রোববার (২০ জানুয়ারি) মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদার দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্সের (বিএনএ) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ সম্পর্কে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলা উচ্চ আদালতে ডিসমিস করার পরও প্ররোচিত হয়ে মামলাটির রায় পরিবর্তন করা হয়। মামলাটি ডিসমিস করতে দুই কোটি টাকা ও অন্য একটি ব্যাংক গ্যারান্টির আড়াই কোটি টাকার অর্ধেক ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উৎকোচ চান এসকে সিনহা। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই এই উৎকোচ চাওয়ার পর তিনি প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেও তখনই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু আসামি এসকে সিনহা ওই সময় প্রধান বিচারপতি হওয়ার কারণে মামলা করা থেকে পিছপা হই।

তিনি বলেন, ‘গত ২০০৭ সালে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমার স্ত্রী ও আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা ফৌজদারি মোকদ্দমা করা হয়। এমনই একটি মিথ্যা ফৌজদারি মোকদ্দমা হলো- মতিঝিল থানার মামলা, যার নং ১০১ (তারিখ ১৮-৬-২০০৮)। পরবর্তী সময়ে আমি ও আমার স্ত্রী ওই মামলার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মোকদ্দমা করি। পরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ প্রাথমিক শুনানি শেষে ওই মামলা স্থগিত করার আদেশ দিয়ে মোকদ্দমাটি কেন কোয়াশড করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুল ইস্যু করেন।’

নাজমুল হুদা বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে কোয়াশড করে দেন। ওই রায়ের আদেশের ফলে আমি ও আমার স্ত্রী মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাই। রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৭ জুন এই মামলার আসামি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা করেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক আনীত ফৌজদারি লিভ টু আপিল ডিসমিস করা হলো।’

এজাহারে তিনি বলেন, ‘লিভ টু আপিল দুটির শুনানিকালে আমি ইন পারসন শুনানি করি। আপিল বিভাগের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির এমন ঘোষণার ফলে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হই যে, আমি ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মোকদ্দমাটির চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। এইভাবে মিথ্যা ফৌজদারি মামলা হতে রেহাই পেয়ে আমি রাজনৈতিক কর্মাকাণ্ডে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত হলে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আমি আমার চারবারের বিজয়ী নির্বাচনী অঞ্চল তথা, ঢাকা-১ সংসদীয় আসন হতে নির্বাচন না করে ওই আসনে আমার চাচা তথা -ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে নির্বাচন করার জন্য আহ্বান জানাই। আমি নিজে যেহেতু সমগ্র বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চলে সমান জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেহেতু আমি সুবিধাজনক কোনো আসন হতে নির্বাচন করার জন্য সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি। এমন পরিস্থিতিতে অপসাংবাদিকতার ধারক ও বাহক দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ২০১৮ সালের ৩০ মার্চে ৩ নং পাতায় ‘জামিন ছাড়াই বছর পার নজমুল হুদা ও স্ত্রীর’ শিরোনামে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমার নজরে এলে আমি দেখতে পাই, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের দায়ের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট ডিভিশনের ফৌজদারি বিবিধ মামলা ঘোষিত ২০১৬ সালের ২৩ মার্চের রায় ও আদেশ লিভ টু আপিল দুটির মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। মতিঝিল থানার মামলা ১০১ নম্বর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। দৈনিক যুগান্তরের এমন প্রতিবেদন পড়ে আমি ও আমার স্ত্রী অত্যন্ত বিস্মিত হই। কেননা যেখানে প্রকাশ্য আদালতে আপিল বিভাগের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এই মামলার আসামি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা হাইকোর্টের দেয়া রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, দুদকের করা লিভ টু আপিল ডিসমিস করা হলো। এরপরে কীভাবে ওই আদেশ পাল্টে গিয়ে লিভ টু আপিল দুটি মঞ্জুর হয়।’

এজাহারে নাজমুল হুদা আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত আসামির একটি অবৈধ লেনদেনের প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ায়ই আমাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। বিগত ২০ জুন ২০১৭ তারিখে বেলা অনুমান ২ ঘটিকার সময় এই মামলার আসামি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার জমাদার আমার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০৩ নং কিউবিকেলসে এসে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন যে, আমি যেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করি।’

মামলার বাদী বলেন, ‘ওই দিনই আমি আসামির সুপ্রিম কোর্টের খাস কামলায় বেলা অনুমান আড়াইটায় উপস্থিত হলে আমাকে একরাশ আশ্চর্যের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে আসামি জানান, ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য মিসেস সালমা ইসলাম আসামিকে নগদ দুই কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন, যেন আমাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার নিমিত্তে তিনি আমার যে কোনো একটি মামলায় সাজা নিশ্চিত করেন। আসামির নিকট থেকে এমন তথ্যপ্রাপ্তি আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসামি আরও জানান যে, তিনি আমার ও আমার স্ত্রীর মামলাগুলোয় আমাদের মুক্তির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তবে এর জন্য তাকে দুই কোটি টাকা ছাড়াও আপিল বিভাগে আমারই দেয়া আড়াই কোটি টাকার একটি ব্যাংক গ্যারান্টির রিলিজ আবেদনের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টির অর্ধেক অর্থ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকাও দিতে হবে।’

তিনি বলেন, আমি যদি এই টাকাগুলো না দেই, তাহলে ব্যাংক গ্যারান্টিতে উল্লিখিত ফৌজদারি আপিল নং ৪৮১৩/২০০৭, যেটাতে আমি ইতোমধ্যেই হাইকোর্ট থেকে খালাসপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি রিলিজ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি সেটির তিনি পুনরায় শুনানি করবেন এবং ব্যাংক গ্যারান্টি রিলিজের পথ বন্ধ করে দেবেন। যদি আমি এমন দাবি না মানি, তাহলে আমার মামলাগুলো পুনরায় চালু হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি যেহেতু, সালমা ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সেহেতু আমাকে সরিয়ে নিজের রাস্তা নিষ্কণ্টক করতে সালমা ইসলাম, আসামির বরাবরে উপরে উল্লিখিত টাকা উৎকোচ আকারে দেয়ার প্রস্তাবনা করেছিলেন।’

এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঢাকা-১ নির্বাচনী এলাকায় আমি টানা বিশ বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত। তিনবারে প্রায় ১০ বছর মন্ত্রী থেকে আল্লাহর ইচ্ছায় অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি বলেই বর্তমান এমপি সালমা ইসলামের জন্য আমার ভাবমূর্তি ধ্বংস করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছিল। অত্র মামলার আসামি সালমা ইসলামের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার মানসে দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি অযুহাতে দুই কোটি এবং ব্যাংক গ্যারান্টি রিলিজের জন্য উৎকোচবাবদ আরও এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে অপরাধজনক অসদাচরণ তথা দুর্নীতির মতো গুরুতর অপরাধ সংগঠন করেছেন, যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দণ্ডবিধি আইনের অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধ হয়েছে। আসামি একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় আমি ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরপরই এজাহার দায়েরের মনস্থির করলেও বাস্তব পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এজাহার করতে কিছুটা বিলম্ব হলো।’