অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন

পুলিশি সেবার মানোন্নয়নে মেধাবীদের স্বাগতম!

অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন : 

পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে গতবছর যারা সারদাতে ট্রেনিংয়ে গিয়েছিল, তাদের নতুন পোস্টিংয়ের খবরে তাদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। তাদেরকে অভিনন্দন। পাশাপাশি নতুন ব্যাচকেও সারদায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনেকেই পুলিশের চাকুরী করবে কি করবে না এ নিয়ে দোটানায় ভুগে থাকে। তাই পুলিশের এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তারদের পেশাগত ভূমিকা নিয়ে লিখছি।

দায়িত্বভার অর্থাৎ পদাধিকারবলে যে সব দায়-দায়িত্ত্ব পালন করতে হয় সে হিসাবে একজন এসআই পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারকে  অনেকগুলো কাজ করতে হয় যার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হলো,

* এফআইআর গ্রহণ করা যা পুলিশের মাধ্যমে একটা ক্রিমিনাল কেস ফাইল হওয়ার প্রথম ধাপ।

এই ধাপে ভুলভাল নথিভুক্তি মামলার মেরিট নষ্ট করে ফেলে যার দরুণ যথাযথ প্রতিকার না পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

* জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ সিনিয়র পুলিশ অফিসার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে অপরাধ তদন্ত করা।

* থানার ডিউটি অফিসার হিসাবে কাজ করা।

* বিট পুলিশের প্রধান হিসাবে এলাকার লোকজনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া।

* কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আওতায় সাধারণ লোকজনকে মোটিভেট করা।

* পুলিশের হায়ার ম্যানেজমেন্ট ও জনসাধারনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা।

* গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব পালন করা।

* চাকুরীর ৫/৭ বছরে ইন্সপেক্টর হয়ে পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়ে একঝাঁক পুলিশকে নেতৃত্ত্ব দেয়া।

যেহেতু জনগনের সাথে পুলিশি এক্টিভিটির প্রধান সমন্বয়ক একজন এসআই তাই তার আচার ব্যবহার ও সেবাকেই আমরা পুলিশের সেবা হিসাবে মূল্যায়ন করি।

আমার দেখা গত ৩টি এসআই ব্যাচে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অফিসার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক অনেক মেধাবী ও রুচিশীল  ছেলেমেয়েরা পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিচ্ছে। যার সুফল আমরা অচিরেই ভোগ করতে পারবো আশা করি।

কিন্তু সমস্যা যেটা হচ্ছে তা হলো আমাদের এটিটিউড। আমরা এই ব্যাপারটার প্রশংসা করতে তো পারছিই না। বরং অনেকেই সমালোচনা ও হতাশা প্রকাশ করছি যে তারা কেনো এএসপি না হয়ে এসআই হচ্ছে। যা সত্যিই দুঃখজনক। বাস্তবতার নিরিখে দেখলে অনুধাবন করা যায় যে প্রতি বিসিএসে কমবেশি একশ জন পুলিশ ক্যাডারে নেয়া হয়। যেখানে পর্যাপ্ত মেধা যোগ্যতা থাকার পরও পদ সীমাবদ্ধতার কারনে বেশিরভাগেরই স্বপ্ন পূরণ হয় না। অন্যদিকে প্রতি বছর পনের শত থেকে দুই হাজার জন এসআই হবার সুযোগ পাচ্ছে। এখানেও তাদের বেশ প্রতিযোগিতা করেই আসতে হচ্ছে। ব্যাংকের অফিসার বা বিসিএস নন ক্যাডার থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেকেই ১০ম গ্রেডের চাকুরী করছে যা এসআই সমমান। এসআইদের বর্তমান বেতন কাঠামোও কিন্তু আগের স্কেলের এএসপিদের চেয়ে বেশি! তাই সদিচ্ছা থাকলে অনেস্ট জীবনযাপন করা স্রেফ একটা শুভ ইচ্ছার ব্যাপার। তাই পুলিশ সার্ভিসে গুনগত প্রত্যাশিত মান অর্জন করতে এইসব তরুণ তুর্কিদের স্বাগত জানাতে হবে এবং জনতুষ্টি অর্জনে তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।

যে সব বন্ধুরা খুশি মনে জনসেবার উদ্দেশ্যে পুলিশ সার্ভিসে এসেছো তাদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। হ্যাঁ, অবশ্যই প্রত্যেকের সর্বোচ্চ মেধাবিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনা উন্মুক্ত। বেটার কিছুর ইচ্ছা থাকলে আর সুযোগ হলে, সে সুযোগ নেয়াই যায়। কিন্তু বর্তমান অবস্থানকে বিন্দুমাত্র খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দেশপ্রেমী পুলিশ অফিসারদের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা।

লেখক: আইনজীবী ও সমাজকর্মী। ই-মেইল: bellal.sincere@gmail.com