গার্ড অব অনার ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন, ক্ষমা চাইলেন ইউএনও
সুপ্রিম কোর্ট

তুরাগ নদী রক্ষায় করা রিটের অসমাপ্ত রায় রোববার

তুরাগ নদী রক্ষায় করা রিটের অসমাপ্ত রায় ঘোষণার জন্য আগামী রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই দিন ঠিক করে আদেশ দেন।

এর আগে (৩০ জানুয়ারি) বুধবার রিটের বিষয়ে রায় ঘোষণা শুরু করেন। আজ অসমাপ্ত রায় ঘোষণার কথা থাকলেও আদালত তা পিছিয়ে আগামী (০৩ ফেব্রুয়ারি) রোববার দিন ধার্য করেছেন।

তবে আজ আদালত এ মামলা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যে আদালত বলেন, দেশে শত শত নদী রয়েছে। নদী দখলকে কেন্দ্র করে আদালতে পৃথক পৃথক মামলা হয়, পৃথক পৃথক আদেশ হয়। দখলদারেরা ফের গিয়ে দখল করে, এমনটি চলতে দেয়া যায় না। আমরা সবগুলোকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাই। নদী নিয়ে এসব কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।

আদালত বলেন, এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের একটি রায় ও গাইড লাইনের আলোকে নদী কমিশন গঠিত হয়েছে। আইন তৈরি হয়েছে। আমরা সেটি দেখে আরও কিছু গাইড লাইন দিয়ে রায় দেব।

এর আগে গতকাল মানুষের মতো নদ-নদীও পাবে আইনি অধিকার এমন মতামত দিয়ে রায় প্রদান শুরু করেন আদালত। রায়ে তুরাগ নদীকে ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করা হয়।

এ মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের আলোকে আইন প্রণেতারা যখন আইন প্রণয়ন করেছেন তখন নদী রক্ষা কমিশনকে একটি ‘ঠুটো জগন্নাথ’ হিসেবে তৈরি করেছেন। কমিশন শুধু প্রতিবেদন বা সুপারিশ দিতে পারবে। কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে না। সেই কারণে কমিশনের যে উদ্দেশ্য গঠিত হয়েছে তা পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। এ কারণে আমরা বার বার আদালতে আসি।

আদালত বলেছেন, আমরা এমন একটি রায় দিতে চাই। যাতে অবৈধ দখলমুক্ত করতে বার বার আদালতে আসতে না হয়। এসব বিষয় নিয়ে আদালত দেখছেন অন্য আরও বিষয়ে দেখে রায় দেবেন। যাতে একটি গাইড লাইন অন্য একটির সঙ্গে কনফ্লিক্ট তৈরি না হয়। এ কারনে আগামী রোববার আদালত তার বাকি অংশ রায় দেবেন বলে জানিয়েছেন।

এ সময় আদালত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়েও কথা বলেছেন। আদালত বলেন, সাংবাদিকদের তথ্যবহুল প্রতিবেদনের আলোকেই আমরা সমাজের অনিয়মের কথা জানতে পারি। সাংবাদিকরা বংশীবাদকের মতো। নদী দখলসহ সব ধরনের অনিয়মের কথা সাংবাদিকরাই তুলে ধরেন।

একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অবৈধ দখল ও মাটি ভরাট’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

গত ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দখলকৃত তুরাগ উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেন। পরে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি বিআইডব্লিউটিএ তুরাগ উদ্ধারের পদক্ষেপ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। এদিন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য গাজীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রিটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর আদালতে জরিপ প্রতিবেদন দাখিল করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর জরিপ অনুসারে তুরাগ নদীর জায়গা উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

নদীর দখলকৃত ভূমি উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে কয়েক আপিল দায়ের করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে রুল শুনানির আদেশ দেন।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের আদালতে রুল শুনানি শুরু হয়ে উভয় পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। বুধবার (৩০ জানুয়ারি) রিটের রায় ঘোষণা শুরু হয়।