খালেদা জিয়া

‘ঘুমিয়ে থাকায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ঘুম থেকে না ওঠায় তাঁকে আদালতে হাজির করা যায়নি। পরে আদালত অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে ৩ মার্চ ধার্য করেন।

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৯-এ আজ বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার পর এজলাসে ওঠেন বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়নি। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আদালত তখন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, ‘খালেদা জিয়া কোথায়?’ এ সময় এজলাসে উপস্থিত কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি আদালতকে জানান, ‘খালেদা জিয়া ঘুমাচ্ছেন। তাই তাঁকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।’

আদালত এ সময় বলেন, একজন আসামি অনুপস্থিত থাকায় অভিযোগ গঠন আজ সম্ভব নয়। তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। এ জন্য ঘুম থেকে উঠতে পারেননি।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অবহেলা করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এর জবাব দিতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘খালেদা জিয়া সম্মানিত নারী। জেল কোডের বিধান অনুযায়ী তিনি চিকিৎসা পাবেন।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবী আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত তখন জানান, এ ব্যাপারে আজই তিনি আদেশ দেবেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত মামলার আসামি মওদুদ আহমদ দুদকের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘খালেদা জিয়াকে কেন আদালতে আনা হলো না? এর উত্তর আমাদের জানতে হবে। আদালতে আসা না আসা খালেদা জিয়ার ওপর নির্ভর করে না। তিনি গুরুতর অসুস্থ।’ মওদুদ আহমদের এমন কথার জবাব দিতে গিয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে আছেন, তা তো কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে গেছেন। মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ কি খালেদা জিয়াকে আনতে পারেন না? পারেন। কিন্তু উনি সম্মানিত ব্যক্তি। আমরাও তাহলে কর্তৃপক্ষকে বলব, যেভাবে পারেন আনবেন। কিন্তু তিনি আসেননি। তিনি গুরুতর অসুস্থ, এ জন্য ঘুম থেকে ওঠেননি—এমন কথা ঠিক নয়।’

মওদুদ তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে আছেন মানে কী?’ জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘খালেদা জিয়া দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছেন।’ তখন উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সমস্বরে বলে ওঠেন, খালেদা জিয়া এর আগে ঠিকই আদালতে হাজির হয়েছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আদালতে না আসা নিয়ে যখন দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছিল, তখন বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আরেক আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ তো আমাকে বলে গেছেন কী কারণে খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি।’ এরপর বিচারক নাইকো দুর্নীতি মামলার পরবর্তী অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ মার্চ ঠিক করে এজলাস ত্যাগ করেন।

নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার যে আদালতে চলছে সেটি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে স্থাপিত। ওই পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষে কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর থেকে তিনি এই কারাগারে আছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও খালেদা জিয়া দণ্ডিত হন।

নাইকো দুর্নীতি মামলা সারসংক্ষেপ
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। আসামিপক্ষ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ জুলাই এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং রুল দেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়া।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।