জি এম আদল

যে আইন না জানলে পথে-ঘাটে লজ্জিত হতে হবে

জি এম আদল :

শৃঙ্খলাহীন জীবন মাঝিবিহীন নৌকার মত। মাঝিবিহীন নৌকা নদীতে ছেড়ে দিলে তা যেমন স্রোতের টানে যত্রতত্র পরিচালিত হয়। তেমনি শৃঙ্খলাহীন মানুষ, জাতি, রাষ্ট্র দ্রুত বিপদগামী হয়ে ওঠে। মানব জাতিকে শৃঙ্খলে নিয়ে আসার জন্য এবং একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ ও সমাজ সৃষ্টির লক্ষ্যে বহুকাল পূর্ব হতে কিছু নিয়ম ও অভ্যাসের চর্চা হয়ে আসছে, যা পরবর্তীতে আইন নামে পরিচিতি লাভ করে।

আইন অত্যন্ত বিশদ একটি বিষয়। হয়ত এ কারনেই আইনকে কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় এখনো সংজ্ঞাবদ্ধ করা যায়নি। আইনের একটি অভিধানিক সংজ্ঞা হল, আইন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত অথবা প্রচলিত এমন কিছু নিয়ম কানুন যা একটি রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী নিজেদের উপর বাধ্যগত বা অবশ্য পালনীয় বলে স্বীকার করে। সাধারন মানুষের মাঝে আইনের একটি সংজ্ঞার বেশ প্রচলন রয়েছে আর তা হলো – সাধারন মানুষ আইন বলতে বোঝে “Law is nothing but common sense ”

আইনে উল্লখ রয়েছে আইন ভঙ্গ করলে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। আমরা জেনে আবার অনক সময় না জেনেও আইন ভঙ্গ করে থাকি। আপনি আইন সম্পর্কে না জেনে যদি আইন ভঙ্গ করেন তবুও আপনাকে শাস্তি পেতে হবে কারন আইন ধরে নেয় সকল নাগরিক উক্ত আইনটি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।

আইন ভঙ্গ করলে আদালত নানা ধরনের শাস্তি দিয়ে থাকে যার মধ্যে কারাদন্ড, অর্থদন্ড উল্লেখযোগ্য। অনেক সময় না জেনে আইন ভঙ্গ করার ফলে লজ্জা দন্ডেও দন্ডিত হতে হয়। আর এ দন্ডটি কোন আদলত বা ম্যাজিস্ট্রেট আপনাকে দিবে না। আপনার আইন ভঙ্গের ফলে যিনি ভুক্তভোগী উনিই আপনাকে আইনটি ভঙ্গ করার সথে সাথে এই লজ্জাদন্ডে দন্ডিত করেন। এ দন্ডইি অত্যন্ত মানহানিকর, এই দন্ডের শিকার হলে আপনার প্রেসটিস পুরাই রসাতলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেটি আমার নিজের ক্ষেত্রেই একবার ঘটেছিল।

প্রায় চার বছর আগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে যখন প্রথম ঢাকায় আসি তখনকার সময়ে আমার সাথে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। গুলিস্তান থেকে মিরপুর যাবার উদ্দেশ্যে একদিন সাত নাম্বার বাসে উঠি। বাসে একটি বাদে আর কোন সিট খালি ছিলনা, আমি উক্ত সিটটি খালি পেয়ে নির্দ্বিধায় বসে পড়ি, আরামেই যাচ্ছিলাম কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন যখন মধ্যপথে এক সুন্দরী তরুনী আপু বাসটিতে উঠে আমাকে ধমকের সহিত বলতে থাকে ওঠেন ওঠেন, এখন থেকে ওঠেন, চোখ নাই? দেখেননা এটা মহিলাদের সিট? মুহুর্তেই আমি হতভম্ব ,আমি সাথে সাথে ওনাকে ওনার সিটটি ছেড়ে দেই। উনিও ওনার সম্পত্তিতে আসন গ্রহণ করেন। উনি ওনার আসনটি পেয়েছিলেন আর আমি পেয়েছিলাম আমার সাথে থাকা চাচির সামনে এক বালতি লজ্জা আর বাস ভর্তি মানুষের সামনে নিজেকে অনেক লজ্জিত হতে হয়েছিল।

সত্যিকার অর্থে বাসে যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকে ওই দিনের পূর্বে তা আমার জানা ছিল না আর তাড়াহুড়া করে বাসে ওঠার ফলে অসাবধানতা বসত বাসের লেখাটিও খেয়াল করিনি। তবে সেই আপুটিকে মনে মনে এই মুহুর্তে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আইনটি শেখানোর জন্য। তবে আপু অতো জোরে ধমকানি না দিলেও পারতেন। আমাকে ধিরে বললেই আমি আপনার আসনটি ছেড়ে দিতাম। অন্তত লজ্জা থেকে তো বাচতাম।

আমার মত আপনাকে যেন এমন লজ্জায় পড়তে না হয় তাই বলছি ভাই, “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” তে নারীদের সংরক্ষিত আসনের কথা উল্লেখ রয়েছে। নারীদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী, প্রবীণ এবং শিশুদের সংরক্ষিত আসনের কথাও এই আইনে উল্লেখ রয়েছে। উক্ত আসনগুলোতে নারী, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ এবং শিশু ব্যতীত অন্য কেউ বসতে পারবেনা বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। নারীদের সংরক্ষিত আসন নিয়ে নানা জনের নানা তর্ক রয়েছে। আমি সেই তর্কে যেতে চাই না। আমি শুধু একটি কথাই বলব, যেহেতু আমাদের দেশের বাসগুলোতে মানুষের পাশাপাশি মুখোশের আড়ালে কিছু নোংরা মানসিকতার মানুষ নামের অমানুষরাও যাতায়াত করে থাকে যারা মেয়েদের শরীরে হাত দেয়ার জন্য বাসের ভীড়ে নিজেদের পশুত্বকে দমিয়ে রাখতে পারে না, সেই দৃষ্টিকোন থেকে বাসের মত ভিড় বহুল একটা জায়গা মেয়েদের জন্য বেশ অনিরাপদ। এই অনিরাপদ ব্যবস্থায় আপনার আমার মা, বোন, স্ত্রী অথবা অন্য কোন প্রিয়জন প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে এই গণপরিবহনে। এই দিকটি বিবেচনা করে হলেও নারীর এই সংরক্ষিত আসনে শুধুমাত্র নারীকেই বসার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ বলে মনে হয়।

লেখক : শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জাজ কোর্ট। E-mail: gmadol71@gmail. com