অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ

বার কাউন্সিলের ফরম ফিলাপ ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংক্রান্ত পরামর্শ

মুরাদ মোর্শেদ :

অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষার আগে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও ফরম ফিলাপের বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভোগেন। আজকের লেখায় আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ ও বার কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লেখাটি পরলে আশাকরি উপকৃত হবেন।

যারা প্রথমবার বার কাউন্সিল এ পরীক্ষা দিবেন তাদের জন্য ফরম ফিলাপের সাধারণ নির্দেশনা
শুরুতে বাংলামটর নামবেন। তারপর রুপায়ন ট্রেড সেন্টার এ প্রবেশ করে লিফট এর →৪র্থ ফ্লোর নেমে, সেইখান থেকে একটা হলুদ (১০০০ টাকার) এবং একটা নীল (৩৭০০ টাকার) স্লিপ নিয়ে ফিলাপ করে →পঞ্চম ফ্লোর উঠে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবার →৪র্থ ফ্লোর গিয়ে সেইখান থেকে Enrollment Form (Application for enrollment as Advocate, Form A) নিয়ে এবং সাথে আপনার S.S.C, H.S.C এবং Law এর সার্টিফিকেট এবং মার্কসিট (এক কপি করে), তারপর ৪ কপি ছবি (Passport size) এবং একটা এফিডেবিট (এফিডেবিট আপনে চাইলে বার কাউন্সিল অফিস থেকে ও নিতে পারবেন এবং মনে রাখবেন এফিডেবিট নোটারি করতে হয়) নিয়ে আপনার সিনিয়রের কাছে যাবেন এইগুলো সত্যায়িত এবং Enrollment Form এ সিগনেচার করার জন্য (Enrollment Form আগে ফটোকপি করে তার উপর ড্রাফট করবেন যাতে মূল ফরমে ভুল না হয়) । তারপর ভালো ভাবে ফিলাপ করে এক কপি ফটোকপি করে নিবেন। তারপর ফরমের ২ টা কপি ( ১ টা মেইনকপি এবং আরেকটা ফটোকপি) নিয়ে বোরাক টাওয়ার এর তৃতীয় ফ্লোর এ যাবেন সেইখানে অফিস মেইনকপি রেখে দিবে এবং ফটোকপিতে সিল মেরে আপনাকে দিয়ে দিবে।

যারা দ্বিতীয়বার বার কাউন্সিল এ পরীক্ষা দিবেন তাদের জন্য ফরম ফিলাপের সাধারণ নির্দেশনা
শুরুতে বাংলামটর নামবেন। তারপর রুপায়ন ট্রেড সেন্টার এ প্রবেশ করে লিফট এর →৪র্থ ফ্লোর নেমে, সেইখান থেকে একটা হলুদ (৫০০ টাকার) এবং একটা নীল (১৫০০ টাকার) স্লিপ নিয়ে ফিলাপ করে →পঞ্চম ফ্লোর উঠে বাংকে টাকা জমা দিয়ে আবার →৪র্থ ফ্লোর গিয়ে সেইখান থেকে Re-Appear Form নিয়ে ফিলাপ করে এবং সাথে গতবারের এডমিট কার্ড এর ফটোকপি এবং সত্যায়িত (নিজের সিনিয়র দ্বারা) ৩ কপি ছবি দিয়ে বোরাক টাওয়ার এর তৃতীয় ফ্লোর এ জমা দিতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন কার্ড যারা পাননি, তাদের সম্পর্কে কিছু আপডেট
রেজিস্ট্রেশন কার্ড নেওয়ার সিরিয়াল বেশ লম্বা। সকাল সকাল গেলে অল্প সময় কাজ সেরে নেওয়া সম্ভব হবে।

পাবলিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাশ করেছেন এবং ইনটিমিশন জমা যাদের ৬ মাসের বেশি তাদেরকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া শুরু করেছে বার কাউন্সিল। তবে কিছু ক্ষেত্রে কার্ড না দিয়ে পরবর্তীতে উনাকে কবে দিবে সেই ডেট দিয়ে দিচ্ছে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাশ করেছেন তাদের মধ্য থেকে যারা ইনটিমিশন ১৬ বা ১৭ সালে প্রথম দিকে জমা দিয়েছেন তাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড রেডি হয়ে আছে বিধায় দিয়ে দিচ্ছে, তবে ১৭ সালের শেষের দিকে বা ১৮ সালে যারা জমা দিয়েছেন তাদের কার্ড বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী নোটিশ দিয়ে আলাদা আলাদা ডেট দিয়ে তাদেরকে একসাথে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া হবে। এসব নিয়ে বার কাউন্সিল সাধারণত আলাদাভাবে নোটিশ দিয়ে থাকে। আপনারা নোটিশ অথবা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে রাখবেন।

রেজিস্ট্রেশন কার্ড না পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ করণীয় ও সতর্কতা [প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য]
এরকম অনেক পরিচিত শিক্ষানবিশ আছেন, যারা কিনা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে প্রায় দেড় বছর হতে চললো ইন্টিমেশন জমা দিয়েছেন। কিন্তু তারা এখনো রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাননি। তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে একটি ছোট্ট কিন্তু আছে! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আপনারা একবার অবশ্যই নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করবেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ আপনাদের নামের তালিকা বার কাউন্সিলে পাঠিয়েছে কিনা। আপনারা জানেন যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগকে একটি তালিকা পাঠিয়ে দিতে হয় বার কাউন্সিলে, যে তালিকার ভিত্তিতেই আপনার রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ যোগাড় করুন যে, তাদের পাঠানো তালিকায় আপনার নাম ঠিকমতো গেছে কিনা। তাদেরকে খানিকটা চাপের ওপর রাখুন। নইলে শেষমুহূর্তে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন নাকি রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংক্রান্ত দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবেন? রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রাপ্তির বিষয়ে ‘শুভস্য শীঘ্রম’ হবেন দয়া করে!

অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষার ফরম ফিলাপ
শুরুতেই একটা কথা জেনে রাখুন যে, যে বা যারাই হাতে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়ে থাকেন, তারাই বার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক নোটিশ ছাড়াই যেকোনো সময় পরীক্ষার ফরম ফিলাপ সেরে রাখতে পারেন। ফরম ফিলাপ করে সংশ্লিষ্ট টাকা জমা দিয়ে দিলে বার কাউন্সিল তা রিসিভ করতে বাধ্য থাকে। তবে ঘটনাচক্রে যদি দেখা যায় যে পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ফরম ফিলাপ এর সময় ফরম ফিলাপের কোনো নতুন মূল্য নির্ধারণ বা পুণ:নির্ধারণ করা হয়, সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট ঘাটতি টাকাও জমা দিতে হবে।

বার কাউন্সিল সর্বশেষ ভাইভা পরীক্ষার সময়ে ঘোষণা দিয়েছিলো যে, যারা রেজি. কার্ড হাতে পেয়েছেন, তারা নভেম্বর ২০ তারিখ থেকে ডিসেম্বর ২০ তারিখের মধ্যে ফরম ফিলাপ করে রাখতে পারেন। তখন অনেকেই যারা রেজি. কার্ড হাতে পাননি, অথচ ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে, তারা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলেন যে তাদের কী হবে! এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না! কেননা, বার কাউন্সিল যাদের রেজি. কার্ড ইস্যু করেনি, তাদেরও রেজি. কার্ড ইস্যু করে তাদেরকে ফরম ফিলাপের প্রয়োজনীয় সময় প্রদান করেই ফরম ফিলাপের আরো পর্যাপ্ত সময় দেবে।

তো, এই ফরম ফিলাপের চলমান সময়ের ভেতরেই বার কাউন্সিলের ভবন স্থানান্তর, কাগজপত্র বা ফাইলসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণের ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিবিধ কারণে ফরম ফিলাপের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল।

নোটিশে বলা হয়েছে যে, পরবর্তীতে যথাসময়ে আবারো ফরম ফিলাপের নোটিশ দেওয়া হবে এবং বিশেষভাবে উল্লেখ ছিলো যে, ‘‘পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উপযুক্ত সকল প্রার্থীকেই ফরম ফিলাপের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হইবে মর্মে আশ্বস্ত করা যাইতেছে।”

তার মানে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি স্থগিত আছে। কিন্তু ঐ যে শুরুতেই বললাম, যারা অলরেডি রেজি কার্ড হাতে পেয়েছেন তারা যদি ফরম ফিলাপ করে রাখেন তাতে কোনোই অসুবিধা নাই। বার কাউন্সিল তা গ্রহণ করে নেবে। অর্থাৎ, আপনি চাইলে আপনার ফরম ফিলাপের কাজ এগিয়ে রাখতে পারেন, এতে কোনোই অসুবিধা নাই।

আবার ঝামেলা বোধ করলে, যখন ফরম ফিলাপের আনুষ্ঠানিক তারিখ ঘোষণা করবে তখনও ফরম ফিলাপ নিশ্চিন্তে করতে পারবেন, যেটা আপনার নিজের জন্য সুবিধাজনক মনে হয়।

সবাই ভালো থাকবেন। নিজের যত্ন নেবেন।

লেখক : আইনজীবী ও প্রতিষ্ঠাতা জ্যুসি ল’।