জামিনে সত্যায়িত পরিচয়পত্র লাগবে

কারামুক্ত থাকতে আসামিরা প্রতারণা করছেন। নিজের বদলে অন্য ব্যক্তিকে (নিজ) সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করাচ্ছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রাম আদালতে এ রকম দুটি ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রতারণা বন্ধ করতে আদালত জামিন শুনানিতে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সত্যায়ন করা আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিচয়পত্র না থাকলে জন্মনিবন্ধন কিংবা ছবিযুক্ত অন্য কোনো পরিচয়পত্রের ফটোকপি আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ওসমান গণি গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এই আদেশ দেন। আগামী ১৮ মার্চ থেকে এটি কার্যকর হবে।

এই আদেশকে ভালো উদ্যোগ জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান গণমাধ্যমকে বলেন, কিছু আসামি নিজের বদলে অন্যকে দিয়ে আত্মসমর্পণ করান। এখন থেকে এটি করতে পারবেন না। সবার এটি মেনে চলা উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনজীবীরা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না। মক্কেল পরিচয় গোপন করে থাকেন।

আদালত সূত্র জানায়, পাওনা টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে আনোয়ারার মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছিলেন রাউজানের মো. রফিক। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান মোজাম্মেল। পরে জামিনে এসে তিনি পলাতক হয়ে যান। এই মামলায় গত বছরের ২২ নভেম্বর আদালত মোজাম্মেলকে ছয় মাসের সাজা দেন।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে মোজাম্মেল নিজে আত্মসমর্পণ না করে তাঁর আত্মীয় দিদারুল আলমকে হাজির করান। দিদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল হাজির হওয়ার জন্য তাঁকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই সরল বিশ্বাসে হাজির হন মোজাম্মেল সেজে দিদার। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দিদারকে (মোজাম্মেল সেজে আসা) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আসামির কাঠগড়ায় থাকা দিদার আদেশটি শুনে কান্না করতে থাকেন। তিনি আদালতকে বলতে থাকেন, ‘স্যার আমি দিদার। মোজাম্মেল নই। মোজাম্মেল বারান্দায় আছেন। আমি আসামি না।’

এই ঘটনায় আদালতের বেঞ্চ সহকারী বখতিয়ার উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে দুজনকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত আসামির আইনজীবী আবিদ হোসেনকে ছয় দিনের মধে৵ কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গত বুধবার একই আদালতে একটি চেক প্রত্যাখ্যানের মামলার আসামি ওয়াহিদুল হক নিজে আত্মসমর্পণ না করে সৈয়দ করিম নামের এক ব্যক্তিকে হাজির করে আত্মসমর্পণ করান। আইনজীবী ফারহান এমরান আসামির আত্মসমর্পণ দরখাস্ত দাখিল করে জামিন চাইলে হাজির করা আসামিকে দেখে বিচারকের কাছে সন্দেহ হয়। আসামির নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম অনবরত জানতে চাইলে আসামি ঘাবড়ে যান। আসামিকে তাঁর নাম স্বাক্ষর করতে বললে নথিতে থাকা চেকের স্বাক্ষরের সঙ্গে মিল না পাওয়ায় বিচারক আসামিকে সত্য স্বীকার করার নির্দেশ দেন। পরে স্বীকার করেন, মূল আসামি ওয়াহিদুল হকের পরিবর্তে নিজে হাজির হয়েছেন। এই ঘটনায় থানায় মামলা করা হয় আদালতের পক্ষ থেকে।

চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, জামিন শুনানির ক্ষেত্রে মূল আসামির পরিবর্তে ভিন্ন ব্যক্তিকে হাজির করার ঘটনা বাড়ায় মুখ্য মহানগর হাকিম আসামির আইনজীবীর সত্যায়ন করা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টের ফটোকপি এগুলো না থাকলে জন্মনিবন্ধন কিংবা ছবিযুক্ত অন্য পরিচয়পত্র আবেদনের সঙ্গে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম আলো