বিয়ে করতে এসে কারাগারে ভুয়া সহকারী জজ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় সহকারী জজ পরিচয়ে বিয়ে করতে গিয়ে রাশেদুল ইসলাম সোহাগ ওরফে রাসেল মাহমুদকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় লোকজন। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে উপজেলার পাড়াগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরদিন শনিবার (২০ এপ্রিল) রাশেদুল ইসলাম ওরফে সোহাগ নামেই ওই ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার ভেরারচালা গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে ভুয়া জজ পরিচয় দানকারী রাশেদুল ইসলাম সোহাগ (৩০) তার বড় ভাই আসাদুজ্জামান ও ভাবিকে নিয়ে ঘটকের মাধ্যমে পাড়াগাঁও গ্রামের ছাইদুর রহমান রতনের মেয়ে রাবেয়া আক্তার শিফাকে (১৯) বিয়ে করার জন্য দেখতে আসেন। রাশেদুল ইসলাম সোহাগ নিজের নাম গোপন করে রাসেল মাহমুদ সাতক্ষীরা জেলার সহকারী জজ পরিচয় দেয়।

এতে কনেপক্ষের লোকজনের সন্দেহ হলে একই নামের সাতক্ষীরা জেলার সহকারী জজ রাসেল মাহমুদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার নম্বরে যোগাযোগ করেন। এতে সোহাগ যে ভুয়া জজ বের হয়ে আসে।

এর আগে ২০১৮ সালে রাশেদুল ইসলাম সোহাগ নিজে জজ পরিচয় দিয়ে কাপাসিয়া থানায় গ্রেফতার হয়। সে সময় গণমাধ্যমে সোহাগের ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই ছবিসহ সংবাদটি রাসেল মাহমুদ ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে মেয়ের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন।

বিষয়টি বুঝতে পেরে রাশেদুল ইসলাম সোহাগ মোটরসাইকেলযোগে মেয়েবাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি টের পেয়ে মেয়ের চাচা মামুন রাস্তা থেকে সোহাগকে ধরে নিয়ে বাড়িতে আটক করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ বাচ্চু ভালুকা মডেল থানায় খবর দিলে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

ছাইদুর রহমান রতন বলেন, শিফা এইচএসসি পাস করার পর বর্তমানে ময়মনসিংহ মুমিনুন্নেছা কলেজে বাংলায় অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। রাশেদুল ইসলাম সোহাগের চাচা একই গ্রামের বাসিন্দা শাহ নেওয়াজ আমার মেয়ের ঘটকালি করেন। শাহ নেওয়াজ তার ভাতিজাকে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সহকারী জজ পরিচয় দেন। ভুয়া জজ ধরা পড়ার পর সোহাগ পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, এর আগেও জজ পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে কাপাসিয়া থানা পুলিশ সোহাগকে গ্রেফতার হয়। যে শার্ট পরে কাপাসিয়া থানায় সে গ্রেফতার হয়েছিল শুক্রবারও সেই শার্ট পরে আমার মেয়েকে দেখতে আসেন। ফলে সহকারী জজ রাসেল মাহমুদের পাঠানো ম্যাসেনজারের ছবি দেখে তাকে চিনতে কষ্ট হয়নি।

পুলিশের কাছে সোহাগ নিজেকে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি গাজীপুর জজকোর্ট অ্যাডভোকেট আল আমীন শ্যামলের জুনিয়র হিসেবে কাজ করছেন।

অ্যাডভোকেট আল আমীন শ্যামল জানান, আমি তাকে চিনি বটে সে আমার জুনিয়ন নন। গত দুই বছর পূর্বে কোর্টে আসা-যাওয়া করত। ইদানীং তাকে কোর্টে আসতে দেখি না। সে মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলত। সে কোথায় লেখাপড়া করেছে আমি জানি না।

তিনি আরও বলেন, সোহাগ আমাকে বলে ছিল তার সহকারী জজ পদে চাকরি হয়েছে। গত দুই বছর ধরে তার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হয় না। সে উকালতি পাস করেছে কিনা জানি না।

এ ঘটনায় ভালুকা মডেল থানার এসআই জহুরুল হক বাদী হয়ে প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। পরদিন শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।

সোহাগের বড় ভাই আসাদ জানান, তার ভাই সোহাগ উকালতি পাস করার পর গাজীপুর জজকোর্টে উকিলের জুনিয়র হিসেবে কাজ করছে। বিয়ের জন্য  বাড়িতে এসেছিল।

ভালুকা মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে ভুয়া জজ সেজে বিয়ে করতে এসে আটক হওয়া ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগেও এ ধরনের ঘটনায় গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।