সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

যৌন নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। কোথাও একটু আলামত দেখলে খবর দিতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইন করা হবে।

জঙ্গিবাদ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ১৪৭ বিধিতে আনা একটি প্রস্তাবের ওপর গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাস হয়। প্রস্তাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেনীতে নুসরাত হত্যার ঘটনায় স্থানীয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা জড়িত ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কে কোন দল, তিনি তা দেখতে চান না। অপরাধীকে সাজা পেতে হবে। যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে, দলমত দেখা হবে না, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যৌন নিপীড়ন যারা করবে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা একটি কঠোর আইন করার কথা বলেছেন। প্রয়োজনে কঠোর আইন করতে হলে অবশ্যই তা করা হবে। এ ধরনের যৌন নিপীড়নে যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।

নুসরাত হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ২০১৪ সালে অগ্নি–সন্ত্রাস হয়েছে। ওই সময় যদি একটি রাজনৈতিক দল অগ্নি–সন্ত্রাস না করত; পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না করত, তাহলে হয়তো ওই অধ্যক্ষের মাথায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চিন্তা আসত না। তাঁর মাথায় এটা আসত কি না সন্দেহ।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষক পূজনীয়। বাবার মতো। সেই শিক্ষক রক্ষক হয়ে যদি ভক্ষক হয়, আর যদি তা মাদ্রাসায় হয়, তাহলে এর থেকে লজ্জা আর কী হতে পারে। যখন একটা ঘটনা ঘটে আর তার প্রচার হয়, তখন দেখা যায় একটার পর একটা সিরিজ ঘটে যাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশেও হোলি আর্টিজানে এ ধরনের হামলা হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘটনা দমন করা গেছে। এরপর আরও ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‍্যাব যখনই এ ধরনের ঘটনার এতটুকু আলামত পাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিক সময়ে তথ্য দিতে পারে বলেই ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে। এতে অনেক জানমাল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বব্যাপীও জনমত সৃষ্টি করতে হবে, যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ ওই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ এবং শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যা ও আহত করা; ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এসব সন্ত্রাসী, যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ সাংসদ মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মইন উদ্দীন খান বাদল, বিএনপির হারুনুর রশীদ, সরকারি দলের মেহের আফরোজ, আরমা দত্ত প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি পাস হয়।