‘ট্রায়লস অব ১৯৭১ বাংলাদেশ জেনোসাইড: থ্রো অ্যা লিগ্যাল লেনস’

একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে তুরিন আফরোজের গবেষণামূলক বই প্রকাশ

১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বরবর নির্যাতনের কথা এখনো আর্ন্তজতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর এদেশীয় দোসররা যে গণহত্যা ঘটিয়েছে, সেটাকে নানাভাবে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে কিছু কিছু মহল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বর্বরোচিত কালরাতের উপর বিশেষ তথ্য উপাত্ত ডকুমেন্ট আকারে সংগৃহীত না থাকায় সেই সুযোগটি নিচ্ছিল পাকিস্তানি দোসরা।

সেদিন যে গণহত্যা হয়েছে– তাতে প্রাণ দিয়েছে ৩০ লাখ শহীদ, নির্যাতিত হয়েছে পাঁচ লাখ নারীর অধিক, উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষ। সেই গণহত্যার বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে প্রায় ৩৯ বছর পর। আর সেই বিচারের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে গণহত্যার নানা ঘটনা। আন্তর্জাতিক বিশ্বে এই বিচার নিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা অপপ্রচার।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে প্যাট্রিজ পাবলিশিং প্রকাশ করল ‘ট্রায়লস অব ১৯৭১ বাংলাদেশ জেনোসাইড: থ্রো অ্যা লিগ্যাল লেনস’ নামক বই। বইটিতে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার বিচারিক প্রক্রিয়াকে আইনিভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একটি অনবদ্য সৃষ্টিকর্ম।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফোরজের লেখা বইটি গণহত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিশ্লেষণ রয়েছে।

ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বইটি সম্পর্কে লেখক বলেছেন, ‘বইটি ইংরেজি ভাষায় লেখার অন্যতম কারণ বাংলাদেশের গণহত্যা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবেদনশীলতা তৈরি করা। বইটিতে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে গণহত্যার বিচারের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে। পাশাপাশি বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতিসরূপ এটি একটি আন্তর্জাতিক ডকুমেন্ট হিসাবে থেকে যাবে বিশ্বের কাছে। সেজন্য আমি বইটাকে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করি এবং এটি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়।

বইটিতে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, যার অধীনে বর্তমানের বিচার চলছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশ সমূহের আইনি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের জাতীয়করণ, সাংবিধানিক প্রাধান্যকে লঙ্ঘন করে ১৯৭৩ সালের আইনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, দেশীয় ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারের বিষয়, গণহত্যার সংজ্ঞায়ন, আসামির জামিনের অধিকার, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের সুযোগ, দণ্ড নিরূপণের প্রক্রিয়া, আপিল ও রিভিউ করার প্রক্রিয়া, প্রেসিডেন্টের মার্জনা ভিক্ষা করার অধিকার ইত্যাদি। লেখক এ সকল বিষয়ে উত্থাপিত আন্তর্জাতিক সমালোচনার কট্টর জবাব দিয়েছেন।

বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে একাডেমিক প্রকাশনার সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। সেখানে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশনা তেমন নেই বললেই চলে। লেখকের বইটি এখানে একটি আবেদন সৃষ্টি করে। বইটিতে মোট ছয়টি অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ে আইনি ব্যাখা বিচারিক বিষয়াদি তুলে ধরেছেন লেখক। বাংলাদেশে পাঠক সমাবেশ থেকে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কপি বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা আছে ৮৯৫ টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ মার্চ গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে সংসদে একটি সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন হয়।