জয়পুরহাট জেলা কারাগার

ধারণক্ষমতার চার গুণ বন্দী, ১৫ বছর ধরে নেই চিকিৎসক

ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় চার গুণ বন্দী জয়পুরহাট জেলা কারাগারে প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। এই পরিস্থিতিতে আরও ভবন নির্মাণ করে কারাগারে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করলে বন্দীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

জয়পুরহাট জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলা কারাগারটি ১৯৮৫ সালে ৮ দশমিক ৬২ একর জমির ওপর নির্মিত হয়। কারাগারের ১২৭ জন বন্দীর থাকার ব্যবস্থা আছে। পুরুষ ১১৫ এবং নারী ১২ জন। পুলিশের বিশেষ অভিযানের সময় কারাগারটিতে কখনো কখনো ৫০০ থেকে ৬৫০ জন বন্দীকে রাখতে হয়।

জেলা কারাগার সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলা কারাগারে পুরুষ আসামিদের জন্য ওয়ার্ড রয়েছে পাঁচটি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০ জন করে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই সব ওয়ার্ডে ২০ জন করে থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে থাকতে হয় ১১৫ থেকে ১২০ জনকে। আর নারী ওয়ার্ড রয়েছে দুটি। ওই দুই ওয়ার্ডে ১২ জন করে নারী আসামির থাকার ব্যবস্থা আছে। সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ কয়েদিদের জন্য একটি সেল রয়েছে। প্রতিটি সেলে রয়েছে ১০টি করে কক্ষ। ওই সেলে একজন করে থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে থাকতে হয় তিনজনকে। আর একটি নারী সেলে রয়েছে দুটি করে কক্ষ। এই কারাগারে ৮ মে পর্যন্ত বন্দী ছিলেন ৪৯৯ জন। ওই দিন পর্যন্ত পুরুষ বন্দী ৪৭৭ জন এবং নারী বন্দী ছিলেন ২২ জন। বিভিন্ন মামলার বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি রয়েছেন ১০৩ জন। সাজাপ্রাপ্ত নারী কয়েদি রয়েছেন একজন। বন্দীদের মধ্যে বেশির ভাগই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ মামলার আসামি।

হাসপাতালে ১৫ বছর ধরে কোনো চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকের পদটি শূন্য। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) কারাগারটির চিকিৎসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। চিকিৎসক না থাকায় কোনো বন্দী অসুস্থ হয়ে পড়লে কারাগার কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাঁকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

জেল সুপার ও জেলারের বাসভবন নেই। নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা। কারাগার ফটকের দুই পাশে ছোট্ট দুটি কুঠরির মতো কক্ষে জেল সুপার ও জেলারের কার্যালয়। কাজের সুবিধার জন্য কারাগারের আরও বড় পরিসরের কার্যালয় থাকা দরকার।

কারারক্ষী মো. রাশেদ মিয়া জানান, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রতিদিন ১০০-১৫০ জন আসেন। ছোট্ট কক্ষে গাদাগাদি করে বন্দীদের দেখা ও তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে এসে স্বজনদের কষ্টই হয়। সাক্ষাতের কক্ষটিও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

জেলার তারেক কামাল জানান, জয়পুরহাট জেলা কারাগারের পক্ষ থেকে কারাগারটি সম্প্রসারণ এবং কারাবন্দীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য তাঁরা কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করেছেন। কারাগারের দক্ষিণ পাশে জমি অধিগ্রহণ করে কারাগার সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

গত ৮ মে জয়পুরহাট জেলা কারাগার থেকে আদালতে মামলার ধার্য তারিখে হাজিরা দিতে আসেন হাফিজার রহমান, হীরা পাল, আবদুল হান্নান এবং আমিনুর রহমান। কারাগারের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, গরমে কারাগারে রাত কাটাতে তাঁদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়। ২০-২৫ জন থাকার ঘরে তাঁদের ১২০-১২৫ জনকে থাকতে হয়। কখনো কখনো এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। রাতে শোয়ার মতো কোনো জায়গা থাকে না। শুতে পারলেও কেউ পাশ ফিরতে পারেন না। কী যে কষ্ট, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তাঁদের দাবি, জয়পুরহাট কারাগারের পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। সূত্র : প্রথম আলো