বাদল ফরাজি

নিরপরাধ বাদল ফরাজির মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

বিনা দোষে কারাগারে আটক বাদল ফরাজির মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ১১ বছর ভারতের কারাগারে সাজা ভোগ করার পর দেশে ফিরে বাদল ভেবেছিলেন এবার মুক্তি মিলবে, ফিরে যাবেন পরিবারের কাছে। কিন্তু আইন বলছে, বাদলকে মুক্তি পেতে হলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট থেকে খালাস পেতে হবে। ওই দেশের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলেই বাদল ফরাজি সহজে মুক্ত হতে পারবেন।

পর্যালোচনার পর বাদল ফরাজির বিষয়ে এমন মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বাদল ফরাজিকে মুক্ত করতে ভারত সরকারকে চিঠি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবে মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের মতে, বাদল ফরাজির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই বাংলাদেশ সরকারের।

মানবাধিকার কমিশনের মতে, বাদল ফরাজির বিষয়ে যেহেতু ভারতের আদালত রায় দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে হয় তাঁকে পুরো সাজা খাটতে হবে, নয় তাঁকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা বাকি সাজা মওকুফ করতে হবে। অন্যদিকে যদি আইনি লড়াই চালাতে হয়, তবে তা সেই দেশের আইনজীবীর মাধ্যমে চালাতে হবে, যা হবে সময়সাপেক্ষ।

প্রায় ১১ বছর আগে বাদল ফরাজি পর্যটক ভিসায় ভারতে যাচ্ছিলেন। বেনাপোল সীমান্ত পার হতেই বিএসএফ তাঁকে ‘বাদল সিং’ হিসেবে গ্রেপ্তার করে। বাদল সিং দিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা খুনের মামলার আসামি। ওই সময় তিনি ইংরেজি বা হিন্দি বলতে না পারায় বিএসএফকে সঠিক বিষয়টি বোঝাতে পারেননি। এ কারণে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাগেরহাটের ছেলে বাদল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৮ বছর বয়সে, এখন তাঁর বয়স ২৯।

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে দিল্লির সাকেত আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করা হলেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। রায়ের পর থেকে তিহার কারাগারে ছিলেন তিনি। সেখানে বন্দীদের কাউন্সেলিং করতে আসা মানবাধিকারকর্মী রাহুল কাপুরের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। সব শুনে তাঁকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন রাহুল। ভারতের বিভিন্ন পত্রিকা এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কারাগারে গিয়ে বাদল ফরাজির সঙ্গে কথা বলে এসেছি। বাদল ফরাজি নিরপরাধ জেনেই আমরা তাঁর মুক্তির চেষ্টা করছি। তবে নিয়ম অনুযায়ী যে দেশে অপরাধ সংঘটিত হবে, সেই দেশে তাঁর বিচার হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ভারতের মানবাধিকার কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে। তবে হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে যদি বাংলাদেশ থেকে চিঠি পাঠানো হয়, তবে বাদল দ্রুত মুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে বাদল ক্ষমা চাইবেন কি না।’

আইনজীবী শাহদীন মালিক এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে সাজা দিয়েছেন, তাই ওই দেশের আদালত ছাড়া আইনি বিষয়ে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যে ওই আসামিকে ক্ষমা করতে পারবেন না, এমন কোনো আইন আমার জানা নেই।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাদলের মুক্তির বিষয় কী করা যায়। যা যা করতে পারি করব। তবে তিনি যে নির্দোষ, সে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় রয়েছে।’ সূত্র : প্রথম আলো