সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেন ও নিহত নুসরাত জাহান রাফি

হাইকোর্টে ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলোচনায় আসা ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। ওসির পক্ষে অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন আবেদনটি দাখিলের পর সেটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।

এর আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গত সোমবার (২৭ মে) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত।

সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান কীভাবে অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন, এর বিবরণ নিজের মুঠোফোনে রেকর্ড করে প্রচার করেছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। বক্তব্য ধারণ করার সময় বিপর্যস্ত নুসরাতকে তিনি বারবার বিব্রতকর প্রশ্ন করেছিলেন। পিবিআইয়ের তদন্তে এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, মোয়াজ্জেম হোসেন ওসি হিসেবে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারায় (২৬, ২৯ ও ৩১) ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর নিখোঁজ রয়েছেন ওসি মোয়াজ্জেম। দুদিন আগেও তাকে রংপুরে দেখা গিয়েছিল বলে একটি সূত্র জানালেও এখন কোথায় আছেন সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত ৮ মে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হলে গত সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, সংযুক্তির আদেশ দেয়ার পর কয়েক দিন আগে মোয়াজ্জেম হোসেন রংপুর রেঞ্জে যোগদান করেছেন। ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে তলব করায় তিনি ঢাকায় গেছেন বলে শুনেছি। এখন কোথায় আছেন সেটা জানি না।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গত ২৭ মার্চ বেলা ১টা ১৮ মিনিটে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন দিয়ে থানায় আসা ভুক্তভোগী নুসরাত জাহানের বক্তব্য ধারণ করেন। এতে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির ব্যক্তিগত পরিচিতির তথ্য প্রকাশ পায়। এই অপরাধে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। মোয়াজ্জেম এই ভিডিও ৮ এপ্রিল শেয়ারইট অ্যাপের মাধ্যমে ‘সজল’ নামের একটি ডিভাইসে পাঠান। এতে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম হয়। এর মাধ্যমে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। শরীরের ৮০ শতাংশ পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার একটি বর্ণনা দিয়ে যান নুসরাত। গায়ে আগুন দেয়ার আগে মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নুসরাতের মায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল।

যৌন হয়রানির অভিযোগ বিষয়ে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি রেকর্ড করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

আইনবহির্ভূতভাবে নুসরাত জাহানকে জেরা করে এর ভিডিও প্রচারের অভিযোগে ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক বাদী হয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা গ্রহণ করার জন্য আবেদন করেন। আদালত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই মামলার তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানালে শুনানি শেষে বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন।