ভোক্তা অধিকার আইন-২০১৮ নামে বিলের একটি খসড়া তৈরি

হজযাত্রায় নৈরাজ্য বন্ধে শাস্তির আওতায় আসছে রিক্রুটিং এজেন্সি

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে সাধারণ মানুষ বেসরকারি হজ এজেন্সির দ্বারস্থ হয়। আর এ সুযোগে অনেক এজেন্সি প্রতারণার আশ্রয় নেয়। নানা অজুহাতে হজযাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে থাকে। এছাড়া এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারাও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

রিক্রুটিং এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের এ প্রতারণা ঠেকাতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ সংশোধন করে ভোক্তা অধিকার আইন-২০১৮ নামে বিলের একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। বিল পাস হলে হজযাত্রায় যে কোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন ভুক্তভোগীরা। আর অভিযোগের সত্যতা পেলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। যা চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর কেবিনেটে আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সেখান থেকে ভেটিংয়ে পাঠানো হবে। পরে তা জাতীয় সংসদে পাস হবে বলে আশা রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘এ আইনের ফলে হজযাত্রায় নৈরাজ্য বন্ধ হবে।’

জানা যায়, ২০১৭ সালে মাওলানা এরশাদ আলী নামে নেত্রকোনা সদর উপজেলার এক ব্যক্তি হজে যাওয়ার জন্য মেসার্স সাদেক ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মাওলানা ওয়াজিউদ্দিনের কাছে টাকা জমা দেন। কথা অনুযায়ী ভিসাও ঠিক হয়। কিন্তু এজেন্সির মালিক উড়োজাহাজের টিকিট দেননি। এ কারণে তার হজে যাওয়া হয়নি। কিন্তু এ ব্যাপারে কারও কাছে অভিযোগ দিতে পারেননি তিনি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জান যায়, হজকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর আবির্ভাব হয়েছে। এরা হজ এজেন্টদের হয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে নানা কৌশলে হজযাত্রী সংগ্রহ করে। বিনিময়ে হজ এজেন্টদের কাছ থেকে হজযাত্রী প্রতি কমিশন পায়। তারা এজেন্সি ঘোষিত প্যাকেজ মূল্যের কমে হজযাত্রী সংগ্রহ করে।

এর পরই শুরু হয় দেন-দরবার। হজযাত্রীর কাছ থেকে আদায় করা পুরো টাকা এজেন্সিকে পরিশোধ করে না। এজেন্সিও পুরো টাকা না পেয়ে হজযাত্রীদের বিমানের টিকিট কাটাতো দূরের কথা, ভিসা প্রক্রিয়াও যথাসময়ে সম্পন্ন করে না। তাই নতুন আইন পাস হলে এজেন্সিগুলোর পাশাপাশি এ মধ্যস্বত্বভোগীদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের খসড়া আইন পাস ও বাস্তবায়ন হলে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘশ্বাস একটু হলেও কমবে।’

ভোক্তা আইন-২০০৯-এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে, সেবা খাতের মধ্যে পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ধরনের প্রতারণা করা যাবে না। প্রতারণা করলেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করা যাবে। নতুন আইনের খসড়ায় হজ নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আইনে শাস্তির পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ১ বছর কারাদণ্ডের বিপরীতে ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিপরীতে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘খসড়া আইনে অনেক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে একজন ভোক্তা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে অভিযোগ করতে পারবেন। বর্তমান আইনে ভোক্তা শুধু অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করতে পারতেন। আর খসড়া আইন পাস হলে একজন ভোক্তা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা অধিদফতরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার চেয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনের খসড়া পাস হলে হজযাত্রা নিয়ে কেউ প্রতারিত হলে কারণ উদ্ঘাটন হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তিনি অভিযোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়া যাবে।’

তবে নতুন আইনে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির জন্য আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালকের আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আপিল করা যাবে। আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কোনো শাস্তি প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করা যাবে।